বিদেশ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা ঘিরে বিরোধী দলগুলোর ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার দলগুলো সরকারের সমালোচনা করেছে। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্ককে ভারতের জন্য ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। এমনকি শুলের খবরের প্রতিক্রিয়ায় রুপির মান কমে এসেছে। ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপকে অন্যান্য প্রধান মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের তুলনায় ‘কঠোর’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেখানে কয়েক মাস ধরে দুই দেশের প্রতিনিধিরা শুল্ক কমানো নিয়ে আলোচনা করছিলেন। রয়টার্স বলছে, এটি এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অংশীদারদের একজনকে দুর্বল করে দেবে। ট্রাম্প বলেছেন, ভারত থেকে আমদানির ওপর শুল্ক আজ শুক্রবার থেকে শুরু হবে। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন এবং ব্রিকসের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য একটি অনির্দিষ্ট ‘জরিমানা’র মুখেও পড়বে নয়াদিল্লি। এর জবাবে নরেন্দ্র মোদির সরকার বলেছে, তারা ট্রাম্পের মন্তব্যের তাৎপর্য মূল্যায়ন করছে। তারা একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ‘নিবেদিতপ্রাণ’। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের একজন আইনপ্রণেতা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এক নোটিশ দিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এই ঘটনা মোদি সরকারের অধীনে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপক পতনের প্রতিফলন ঘটায়।’ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টের বিতর্কটি ‘ভারতীয় রপ্তানির ওপর ২৫% মার্কিন শুল্ক এবং জরিমানা আরোপ রোধে সরকারের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার’ ওপর আলোকপাত করবে। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবারও ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তারা তাদের মৃত অর্থনীতিকে একসঙ্গে ধ্বংস করে দিতে পারে।’ ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে রাশিয়া ভারতের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ছিল, যা মোট সরবরাহের ৩৫%। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উচ্চ শুল্ক ভারতের উৎপাদন উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। রয়টার্স জানিয়েছে, পাঁচ মাসেরও বেশি সময় আগে দিনের সর্বনিম্ন মূল্য স্পর্শ করার পর আজ রুপির দাম ডলারের বিপরীতে ০.২% কমে ৮৭.৬১৭৫ এ লেনদেন হচ্ছে। এশিয়া ডিকোডেডের অর্থনীতিবিদ প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলেন, ভারত একটি ‘অপরিপক্ষ চুক্তি’ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদিও আরও বাণিজ্য আলোচনা শুল্কের হার কমাতে পারে। তবে ভারত তার পূর্ব প্রতিবেশীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো ফলাফল অর্জন করবে – এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।’ মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ‘সংক্ষিপ্ত কিন্তু মারাত্মক’ সংঘাতের পর থেকে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অসন্তুষ্ট এবং এর প্রতিবাদও করেছে। এর ছায়া পড়েছে বাণিজ্য আলোচনার ওপরেও। ট্রাম্প এবং মোদি অতীতে প্রকাশ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রদর্শন করা সত্ত্বেও সামপ্রতিক মাসগুলোতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ১০ মে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ভারত-পাকিস্তানকে থামানোর জন্য ট্রাম্প বারবার কৃতিত্ব নিয়েছেন। কিন্তু ভারত তার এই দাবির বিরোধিতা করে। তারা বলে, এটি ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এবং বাণিজ্য হুমকির ফলে হয়নি। বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আমাদের অর্থনৈতিক নীতি ধ্বংস করেছে, আমাদের প্রতিরক্ষা নীতি ধ্বংস করেছে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতিও ধ্বংস করেছে।’