
মোঃ নাজমুল, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট): ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও সাগরমুখী হচ্ছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে। “ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান–২০২৫” সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর জেলেদের মুখে এখন আনন্দের ঝিলিক।

জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞা চলেছে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার জানান, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকে সফল করতে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বলেশ্বর ও পানগুছি নদীসহ বিভিন্ন বাজার এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।
২২ দিনব্যাপী এই অভিযানে ৩০টি অভিযান ও ৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এতে ১.৩৮২ লক্ষ মিটার অবৈধ কারেন্ট জালসহ ধ্বংসাত্মক জাল জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়। একই সঙ্গে ৩,০০০ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৭ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, ব্যানার টানানো ও মাইকিং কার্যক্রম চালানো হয়। পাশাপাশি মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকা ২,১২৭টি জেলে পরিবারের মাঝে পরিবারপ্রতি ২৫ কেজি করে মোট ৫৩.১৭৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়।
অভিযানে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন।
মোরেলগঞ্জের বলেশ্বর ও পানগুছি নদীর তীরবর্তী বারইখালী, সিরনিখালী, চিংড়াখালী, গাবতলা ও তেতুলবাড়ীয়া ঘাটের জেলেরা জানান, সরকারী নিষেধাজ্ঞা মেনে তারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত ছিলেন। এখন সাগরমুখে জাল ফেলতে পারার আনন্দে তারা নতুন আশায় বুক বাঁধছেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন,
“এবারের অভিযান অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণের পর যদি আগামী জাটকা সংরক্ষণ অভিযানও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও জেলেদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও পাথরঘাটা উপকূলের ইলিশভরা নদীগুলোতে এখন জেলেদের নৌকা সাজানোর ব্যস্ততা। আকাশে শঙ্খচিলের ডানা মেলা, নদীতে জাল মেরামতের শব্দ,সব মিলিয়ে আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে উপকূলের নদী ও জেলেপাড়া।