• বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ০৬:৩০
সর্বশেষ :
ফকিরহাটে ইউপি সদস্যবৃন্দের গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ফকিরহাটে ভূমি মেলা উপলক্ষে র‌্যালি ও সভা অনুষ্ঠিত মোরেলগঞ্জ শরণখোলায় ৫০ হাজার সদস্য নবায়ন ফর্ম বিতরণ করলো বিএনপি স্লোভাকিয়ায় বাদামি ভালুকের মাংস বিক্রির পরিকল্পনা গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের গুলি, আহত ৪৭ পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে মেক্সিকোতে ১৭ মরদেহ উদ্ধার জাতিসংঘের সতর্কবার্তা আগামী চার বছরে বাড়তে পারে বৈশ্বিক গড় উষ্ণতা রাশিয়ার বিমান চলাচল ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় ব্যাহত : মস্কো ইসরাইলি হামলায় গাজায় একই পরিবারের ৯ জনসহ নিহত ১৬ ইসরায়েল শিগগিরই ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিতে পারে : রিপোর্ট

জেনে নিন সুপারফুড জামের কিছু পুষ্টিগুণ

প্রতিনিধি: / ১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

জমজমাট গ্রীষ্মে অল্প কিছুদিনের জন্য বাজারে আসে সুপারফুড জাম। বছরে মাত্র দুই থেকে এক মাস পাওয়া গেলেও মৌসুমী ফলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফলগুলোর একটি জাম। জাম গাছে মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে। মে জুন মাসে ফল বড় হয়। জামের স্বাদ আর পাঁচটা ফলের মতো মিষ্টি ও রসে ভরপুর না। একটু কষ কষ ধরনের হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফল। সেই সঙ্গে অসাধারণ গাঢ় বেগুনী রং। স্বাদের কারণে শুরুতেই এটি অন্য ফলের চেয়ে আলাদা। তবে এর পুষ্টিগুণ ফলটিকে আরো অনন্য করে তুলেছে। তাহলে চলুন জেনে নেই জাম খাওয়ার উপকারিতা।

জামের পুষ্টিগুণ
১. ভিটামিন-সি
ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে: ভিটামিন-সি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে সংক্রমণ (সর্দি-কাশি, ফ্লু) ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে; কলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বক টানটান রাখে এবং বলিরেখা কমায়।

আয়রন শোষণে সাহায্য করে: ভিটামিন-সি উদ্ভিজ্জ আয়রন শরীরে ভালোভাবে শোষিত হতে সাহায্য করে, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: ভিটামিন-সি রক্তনালির স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে: ভিটামিন-সি কলাজেন উৎপাদনের মাধ্যমে টিস্যু মেরামত করে এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সারিয়ে তোলে।

২. আয়রন
প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ আয়রনের একটি চমৎকার উদ্দেশ্য জাম।

হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে: লাল রক্তকণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিনের মূল উপাদান হলো আয়রন, যা ফুসফুস থেকে শরীরের সব কোষে অঙ্েিজন পৌঁছে দেয়। তাই জাম এটি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

মায়োগ্লোবিন গঠন করে: আয়রন পেশিতে অঙ্েিজন সংরক্ষণ করে, যা শারীরিক কার্যক্রমের সময় ব্যবহার হয়।

শক্তি উৎপাদন ও বিপাকীয় কার্যক্রম: আয়রন অ্যাডেনোসাইন ট্রাইফসফেট বা এটিপি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, যা দেহের শক্তির প্রধান উৎস। সেই সঙ্গে আয়রন এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়, যা খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আয়রন শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: আয়রন মস্তিষ্কে অঙ্েিজন সরবরাহ নিশ্চিত করে স্মৃতি, মনোযোগ ও জ্ঞানীয় দক্ষতা বজায় রাখে। আয়রনের ঘাটতি শিশুদের বুদ্ধিমত্তা ও শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় সুস্থতা নিশ্চিত করে: বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য যথেষ্ট আয়রন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আয়রন গর্ভবতী নারীদের রক্তের পরিমাণ বাড়ায় এবং ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: আয়রন কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পটাশিয়াম
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে পটাশিয়াম। এটি রক্তনালিগুলোর প্রসারণে সাহায্য করে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: পটাশিয়াম অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিদমিয়া) প্রতিরোধ করে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

স্নায়ু ও পেশীর কার্যকারিতা বজায় রাখে: পটাশিয়াম স্নায়ু সংকেত শরীরের কোষগুলোতে পাঠাতে সহায়তা করে। এটি পেশীর নড়াচড়ার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।

তরল ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে: পটাশিয়াম শরীরের সেলুলার স্তরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে ও ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: ক্যালসিয়ামের ক্ষয় রোধ করে পটাশিয়াম। এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে: দেহে যথেষ্ট পটাশিয়াম থাকলে এটি কিডনিতে পাথর হওয়ার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়।

৪. অ্যান্টিঅঙ্েিডন্ট
ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে কোষকে রক্ষা করে: ফ্রি র‌্যাডিকেল কোষের গঠন নষ্ট করে, যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অকাল বার্ধক্যের কারণ হতে পারে। অ্যান্টিঅঙ্েিডন্ট এই ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি এবং দূষণের কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি কমায়। বলিরেখা, ফাইন লাইন এবং ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: অ্যান্টিঅঙ্েিডন্ট খারাপ কোলেস্টেরল এর অঙ্েিডশন কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: এটি অঙ্েিডটিভ স্ট্রেস কমিয়ে আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে: কিছু অ্যান্টিঅঙ্েিডন্ট, যেমন সেলেনিয়াম ও লাইকোপিন, টিউমার গঠন রোধে সাহায্য করতে পারে।

৫. ফাইবার
ফাইবার বা আঁশ হলো উদ্ভিদজাত খাবারের এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীর পুরোপুরি হজম করতে পারে না, তবুও এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ও দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা নিশ্চিত করে।

এতোসব পুষ্টিগুণ আপনি পাবেন ছোট্ট ফল জাম থেকে। সেই সঙ্গে জামের প্রাকৃতিক শীতলীকরণ গুণ প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গরমে জামের রস বা কাঁচা জাম খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া ও ডিহাইড্রেশনও কমে। তবে অতিরিক্ত জাম খেলে অ্যাসিডিটি বা পেটে গ্যাস হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জামের বীজ ব্যবহার করতে পারেন। তাই এই গ্রীষ্মে বাজারে জাম দেখলেই পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে কিনে নিন এক ঝুলি পুষ্টি।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com