বিদেশ : হংকংয়ের শেয়ারবাজারে চীনের ব্যাটারি নির্মাতা কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেঙ্ টেকনোলজি কোং লিমিটেড (সিএটিএল)-এর শেয়ারের দাম মঙ্গলবার প্রথম দিনেই ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কোম্পানিটি আইপিও (গণপ্রস্তাব)-এর মাধ্যমে এবছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। হংকং থেকে এএফপি জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিক্রিত ইলেকট্রিক ভেহিকেলের (ইভি) ব্যাটারির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি উৎপাদন করে বৈশ্বিক ব্যাটারি বাজারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিএটিএল। চীনের অভ্যন্তরীণ ইভি বাজারে দ্রুত বৃদ্ধির ফলে কোম্পানিটি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং এখন তারা টেসলা, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ ও ভঙ্ওয়াগেনের মতো শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে। সিএটিএল ইতোমধ্যেই দক্ষিণ চীনের শেনজেন শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু করছে এবং ডিসেম্বরে হংকংয়ে দ্বিতীয় তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হংকংয়ে এর শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ২৯৯.৮০ ডলার (প্রায় ৩৮.৪ ডলার) পর্যন্ত ওঠে। যা তাদের প্রাথমিক তালিকামূল্য ২৬৩.০০ ডলারের চেয়ে ১৩.৭ শতাংশ বেশি। ২০১১ সালে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর নিংদে-তে প্রতিষ্ঠিত এই সিএটিএল বেইজিং সরকারের ব্যাপক আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। সরকার সামপ্রতিক বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ প্রযুক্তি খাতে দেশীয় সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কোম্পানিটি চীনের বিশাল ইভি বাজারে চলমান তীব্র মূল্যের প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়েও টিকে আছে। যেখানে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে। সিএটিএল জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা ৩২.৯ শতাংশ বেড়েছে এবং একই সময়ে বিক্রি ৬.২ শতাংশ বেড়ে ৮৪.৭ বিলিয়ন ইউয়ানে (প্রায় ১১.৭ বিলিয়ন ডলার) দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়বার তালিকাভুক্তি থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহার করে কোম্পানিটি হাঙ্গেরিতে তাদের ব্যবসা সমপ্রসারণ করতে চায়। ইতোমধ্যেই সিএটিএল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে জার্মানিতে প্রথম কারখানা চালু করেছে। গত ডিসেম্বরে তারা জানিয়েছিল, স্পেনে একটি নতুন ব্যাটারি কারখানা তৈরির জন্য তারা অটোমোটিভ কোম্পানি স্টেলান্টিসের সঙ্গে কাজ করবে। এই প্রকল্পে ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এই কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ। গতকাল মঙ্গলবারের এই ব্লকবাস্টার আইপিও এমন সময়ে হয়েছে, যখন হংকংয়ের স্টক এঙ্চেঞ্জ আবারও বিশ্বের শীর্ষ আইপিও ভেন্যু হওয়ার লক্ষ্যে বড় চীনা কোম্পানিগুলোকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ২০২০ সালে বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রক কড়াকড়ির কারণে তাদের অনেক বড়বড় কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার পরিকল্পনা স্থগিত করেছিল। যার ফলে নতুন শেয়ার অফারে ধারাবাহিকভাবে পতন দেখা যায়। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানুয়ারিতে কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেঙ্ টেকনোলজি কোং লিমিটেডকে (সিএটিএল) ‘চীনা সামরিক কোম্পানি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই তালিকাভুক্তির বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের ইউহাউস সিলেক্ট কমিটি এপ্রিল মাসে জেপি মরগান ও ব্যাংক অফ আমেরিকাকে চিঠি লিখে জানায়, তারা যেন কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেঙ্ টেকনোলজি কোং লিমিটেড (সিএটিএল)-এর মতো ‘সামরিক সংযুক্ত কোম্পানি’র আইপিও থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। তবে দুটি ব্যাংকই এখনও কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেঙ্ টেকনোলজি কোং লিমিটেড (সিএটিএল)-এর আইপিও প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বেইজিং এই তালিকাকে “দমনমূলক” বলে নিন্দা করেছে, অন্যদিকে কনটেম্পোরারি অ্যাম্পেরেঙ্ টেকনোলজি কোং লিমিটেড (সিএটিএল) জানিয়েছে যে তারা কোনো সামরিক কার্যকলাপে যুক্ত নয়। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, সিএটিএল এই চুক্তিটিকে “রেজি এস” অফার হিসেবে করার পরিকল্পনা করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনশোর বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করা যাবে না। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির আইনি ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
https://www.kaabait.com