সর্বশেষ :
পাইকগাছা–কয়রা; বহু প্রতিশ্রুতির উপকূল এখনো বঞ্চনার ঢেউয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের দুই আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত লক্ষ্ণীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে তালা দিয়ে আগুন: ঘুমন্ত শিশু নিহত, দগ্ধ ৩ ধর্ম নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় হত্যা করে লাশ পোড়ানো, গ্রেপ্তার ৭ নিথর দেহে দেশে ফিরলেন ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় মানিক মিয়ায় ওসমান হাদির শেষ বিদায়, জানাজা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ওসমান হাদির মৃত্যুতে পালিত হচ্ছে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক অস্থির পরিস্থিতিতে শিল্পকলার সব আয়োজন বন্ধ ওসমান হাদির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, দুপুরে সংসদ ভবনে জানাজা লাঠি ভর দিয়ে চলা বৃদ্ধও আসামি:  মোরেলগঞ্জে হয়রানিমূলক মামলা  প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ  ও মানববন্ধন
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

পাইকগাছা–কয়রা; বহু প্রতিশ্রুতির উপকূল এখনো বঞ্চনার ঢেউয়ে

প্রতিনিধি: / ২ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা(খুলনা) :দক্ষিণ–পশ্চিম উপকূলের দুটি উপজেলা পাইকগাছা ও কয়রা—দুই দশক ধরে ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, স্বাস্থ্যসেবা–সংকট ও দুর্বল অবকাঠামোর চ্যালেঞ্জে জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি নির্বাচনে এখানে প্রতিশ্রুতির বন্যা নামে, কিন্তু মানুষের বাস্তব জীবন এখনো বদলায়নি প্রত্যাশিতভাবে। উন্নয়ন ও উপেক্ষার এই দ্বৈত বাস্তবতা খুলনা–৬ আসনকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এলাকা করে তুলেছে।

দুর্যোগ–ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দু, কিন্তু নেই টেকসই সুরক্ষা

কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষ বর্ষার সময় আতঙ্কে দিন কাটায়। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্পানের পর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এখনো আসেনি।

কয়রার আমিনুর রহমান বলেন—“আমরা শুধু চাই শক্ত বাঁধ। ঝড়ের ভয় নয়, ভয় পাই পরের দিনের জীবনটাকে।”

লবণাক্ততা ক্রমশ বাড়ছে। পানির কষ্ট এতটাই প্রকট যে প্রতিদিন বহু মানুষ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে মিঠাপানি সংগ্রহ করে।

পাইকগাছার খেটে–খাওয়া নারী রাবেয়া খাতুন বলেন—

“মিঠাপানি কিনে খেতে হয়। গরীবের পক্ষে এটা টানা কঠিন।”

যোগাযোগ–অবকাঠামো: বর্ষায় বিচ্ছিন্ন, শুষ্ক মৌসুমেও দুর্ভোগ

পাইকগাছা–কয়রার বহু সড়ক এখনো জরাজীর্ণ। বর্ষায় চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা—সবই ব্যাহত হয়।স্থানীয় ছাত্র রাজু মল্লিক বলেন—

“স্কুলে যেতে আমাদের সময় লাগে শহরের ছাত্রদের দ্বিগুণ। এটা বৈষম্য ছাড়া কিছুই না।”

অতীতে কিছু সড়ক সংস্কার হলেও টেকসই রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রকট। পাকা সড়কের পাশাপাশি সেতু–কালভার্টেও উন্নয়ন প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যসেবা: কাঠামো আছে, কার্যকারিতা নেই

দু”উপজেলা মিলিয়ে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। জরুরি বিভাগ, ডেলিভারি সেবা আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।

কয়রার জেলে নুরুল হক বলেন—

“হাসপাতালে গেলে শুনি ডাক্তার নেই। তখন আমরা নদীপথে দূরে যেতে বাধ্য হই—জীবনটা ঝুঁকিতে থাকে।”

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা উপকূলের শিক্ষা খাতে বৈষম্য চোখে পড়ে। স্কুল–কলেজে শিক্ষক সংকট, অপর্যাপ্ত ভবন ও ল্যাবরেটরি শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দেয়। উচ্চশিক্ষা করতে হলে সবাইকে শহরমুখী হতে হয়।

অন্যদিকে, কৃষি কমে গেছে লবণাক্ততার কারণে। চিংড়ি শিল্পে আয়ের সুযোগ থাকলেও দামের অস্থিরতা, লবণাক্ত পানি এবং ঘের–নির্ভর অর্থনীতিতে অনেক পরিবার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: প্রতিশ্রুতির তালিকা লম্বা, বাস্তবায়নের গতি ধীরপ্রতিটি নির্বাচনেই উপকূল রক্ষায় টেকসই বাঁধ, আধুনিক সড়ক নেটওয়ার্ক, কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা, পানির সঙ্কট নিরসন ও কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি আসে।এবারও রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন—পাইকগাছা–কয়রাকে জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা হবে,মিঠাপানির স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া হবে, স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ বরাদ্দ আসবে, ডুবে যাওয়া অঞ্চলগুলো পুনর্বাসন করা হবে।

মানুষ এসব প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানায়, তবে তাদের একটাই অনুরোধ—প্রতিশ্রুতি যেন কাগজে না থাকে, মাঠে আসে।

পাইকগাছা–কয়রার মানুষ অভিযোগ নয়—অধিকার চায়।

উন্নয়ন চায়, নিরাপত্তা চায়, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চায়।

দুই উপজেলার বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাসের শেষে তারা শুধু একটি কথাই শোনার অপেক্ষায়—উপকূলের এই মানুষরাই দেশের সমান নাগরিক, তাই উন্নয়নও সমান পাওয়ার অধিকার তাদের।


এই বিভাগের আরো খবর