নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম।
গত ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে বলা হয়।
এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৭ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনকে বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “রিটে আমরা কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ করেছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় দলের কমিটি থাকতে হবে বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য তিন জেলায় উপজেলাগুলোর সংখ্যা মাত্র ২০টি। ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ইচ্ছা করলেও কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারবে না, এমনকি আঞ্চলিক দলও নিবন্ধন করাতে পারবে না। এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শামিল।”
এছাড়াও, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৯০(খ) ধারা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো সাংবিধানিকভাবে বৈধ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিটে।
হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি শেষে ইসির গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেন এবং রুল জারি করে জানতে চান, এই বিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীর দাবি, বর্তমান আইনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য যে শর্তগুলো রয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে বৈষম্যমূলক। বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সংবিধানে রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা ও জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নতুন শর্তাবলি সংবিধানের সেই চেতনার পরিপন্থী।
নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০(ক) ধারা অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি থাকা, ১০০টি উপজেলা ও ২২টি জেলায় সক্রিয় সংগঠন থাকা এবং নির্দিষ্টসংখ্যক সদস্য থাকা অন্যতম।
তবে হাইকোর্টের আদেশের পর নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছেন।
এই আদেশের ফলে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ২০ এপ্রিলের নিবন্ধন সময়সীমা আপাতত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের ভবিষ্যৎ।