সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কিস্তি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার। রোববার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমরা আগামী সরকারের জন্য আইএমএফের ঋণ, সংস্কারের শর্ত ও অন্যান্য বিষয় সাজিয়ে দিচ্ছি। তারা চাইলে এখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোবে। পে কমিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার।”
ড. সালেহউদ্দিন জানান, আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। সংস্থাটি রাজস্ব আয় বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে। “আইএমএফ আমাদের বলেছে, তোমরা যা করছো তা সঠিক পথে করছো। তবে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত এখনো কম,” বলেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির ষষ্ঠ কিস্তি নির্বাচিত সরকারের সময়েই ছাড় হবে। ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির একটি নতুন মিশন বাংলাদেশে এসে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে কিস্তি দরকার নেই। তারা আগে রিভিউ করুক, নির্বাচিত সরকার চাইলে তখন বিষয়টি এগোবে।”
বেতন কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, “একটি পে কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজ চলছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন বলা সম্ভব নয়। নতুন সরকার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।” বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০১৫ সালের পে স্কেলে বেতন পাচ্ছেন। দেশে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী কর্মরত আছেন।
বাজার পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “চালের দাম এখন মোটামুটি সহনীয়, কিন্তু যাতায়াত খরচ ও বাড়িভাড়া কিছুটা বেড়েছে। সার ও সেদ্ধ চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খাদ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকার চেষ্টা করছে।”
বৈঠকে জানানো হয়, সরকার ৩০ নভেম্বর থেকে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে। প্রতি কেজি ধান ৩৪ টাকা, আতপ চাল ৪৯ টাকা এবং সিদ্ধ চাল ৫০ টাকা দরে সংগ্রহ করা হবে। সরকারের লক্ষ্য ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও আতপ চাল এবং ৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তৈরি করছি যাতে আগামী সরকার সহজে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, আমরা সেটিকে সুসংহত অবস্থায় হস্তান্তর করতে চাই।”