ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের জন্য প্রণীত গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন।
বৈঠকে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)-এর প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে থাকা কিছু বিধিনিষেধ ও অস্পষ্ট ধারা সংশোধনের দাবি জানান। তারা জানান, নীতিমালায় কিছু বিধান সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে অপ্রয়োজনীয় বাধা তৈরি করছে।
বৈঠক শেষে বিজেসি চেয়ারম্যান রেজায়োনুল হক রাজা বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তৈরি আচরণবিধিতে আমরা কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জন্য অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি করবে। যদি আইডি কার্ড ইস্যু করা থাকে, তবে আলাদা অনুমতির দরকার নেই।” তিনি আরও জানান, সাংবাদিকদের কেন্দ্রে থাকার সময়সীমা ১০ মিনিট নির্ধারণ করাও যুক্তিযুক্ত নয়।
রেজায়োনুল হক রাজা বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এটি কোনো কঠোর সময়সীমা নয়, বরং জায়গার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একটি সাধারণ নির্দেশনা মাত্র। “আমরা বুঝেছি, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সীমিত করার উদ্দেশ্যে এই ধারা নয়। কমিশন আন্তরিকভাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করতে চায়,” তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে সরাসরি সম্প্রচার নিয়েও আলোচনা হয়। “আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল থাকা উচিত যাতে সম্প্রচারে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত না হয়। তবে অনিয়ম বা কেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বই হবে তা প্রকাশ করা,” যোগ করেন তিনি।
রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে তার বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন প্রার্থীদের আচরণবিধিতে শাস্তিমূলক ধারা রয়েছে, তেমনি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এই নীতিমালা শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রযোজ্য হোক। কারণ ভবিষ্যতের নির্বাচনে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।”
বৈঠকে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাংবাদিকদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং নীতিমালা সংশোধনের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিজেসি ও আরএফইডির নেতারা আশা প্রকাশ করেন, কমিশন তাদের সুপারিশ বিবেচনা করে গণমাধ্যম নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবে। এতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা আরও নিশ্চিত হবে এবং জনগণের জানার অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে।