বিদেশ : যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার একটি রাসায়নিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এই হামলাকে ‘সফল আঘাত’ বলে উল্লেখ করেছেন, যা রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারা জানিয়েছে, এই ‘বৃহৎ হামলার’ পূর্ণ ফলাফল এখনো মূল্যায়নাধীন। খবর বিবিসির। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়া পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে ছয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার হামলায় কিয়েভ ও ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রিপোর্টে বলা হয়, রাশিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। কিয়েভ শহরে হামলায় দুইজন নিহত হন, আর আশপাশের এলাকায় এক নারী ও দুই শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো ব্রিয়ান্স্ক কেমিক্যাল প্ল্যান্টে হামলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে এর আগে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার সতর্কবার্তা দিয়েছিল। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এই হামলা রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র ধ্বংসের কৌশলের অংশ। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্রিয়ান্স্ক রাসায়নিক স্থাপনা হলো আগ্রাসী রাষ্ট্রের সামরিক-শিল্প কমপ্লেঙ্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে বারুদ, বিস্ফোরক ও রকেট জ্বালানির উপাদান তৈরি করা হয়—যেগুলো ইউক্রেনের ওপর হামলায় ব্যবহার করছে রুশ সেনারা।’ এই হামলার দিনই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা খাতে ‘চাপ বাড়াবেন’, যতক্ষণ না ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনায় রাজি হন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যেকোনো যুদ্ধবিরতির আগে, চলাকালীন ও পরেও ইউক্রেনকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।’ কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো গতকাল বুধবার বলেন, রাতে রুশ হামলার ধ্বংসাবশেষে রাজধানীর বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো নিশ্চিত করেছেন যে, রাজধানীতে দুইজন নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আকাশে বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটের পাল্টা আঘাতের শব্দে বিস্ফোরণ শোনা যায় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এই সর্বশেষ হামলাগুলো হলো এমন এক সময়ে, যখন হোয়াইট হাউসে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাহক ক্রুজ মিসাইল সরবরাহের অনুরোধ নাকচ করেন। ট্রাম্প আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বৈঠক করবেন, তবে গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘এখন বৈঠক করার অর্থ হবে সময় নষ্ট করা’ এবং পরিকল্পনাটি স্থগিত করেন। হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, আলোচনার প্রধান বাধা হলো রাশিয়ার যুদ্ধবিরতিতে অস্বীকৃতি। মাত্র এক মাস আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেন ‘তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তসহ পুরো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে’ — যা তার পূর্বের অবস্থান থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে এবং এখনো দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল (যার মধ্যে ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে) দখলে রেখেছে।