রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার পাঁচজনের একজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চেক ও আর্থিক দলিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ জুলাই) মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গুলশানের ঘটনায় গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মোট দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক এবং প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ) উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলশান-২ এর ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা নিতে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা প্রথমে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিল এবং পরে আরও ৪০ লাখ টাকা নিতে গেলে তারা ধরা পড়ে।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ), সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন এবং আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত কিশোর আমিনুল ইসলাম। রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সাবেক নেতা এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাৎক্ষণিকভাবে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম ও সাদাবকে বহিষ্কার করে। সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে এই বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রাখার নির্দেশনা দেন।
চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আদালতে চারজনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অভিযুক্ত কিশোর আমিনুল ইসলামকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট, টহল টিম ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগর এলাকায় ১৮৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ডাকাত, চোর, মাদক ব্যবসায়ী ও পরোয়ানাভুক্ত আসামিও রয়েছে। একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এবং গ্রেফতার করা হয়েছে কবজি কাটা চক্রের দুই সদস্য।
রাজধানীতে চুরি হওয়া ১২৩টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডাকাতি, খুন ও চুরির ঘটনায় প্রায় ৮ হাজার মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর বাইরে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে প্রায় তিন হাজার মামলা ও শতাধিক গাড়ি রেকার ও ডাম্পিং করা হয়েছে।
মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতাররা কোনো সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপরাধ করে থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ডিএমপির পক্ষ থেকে।