গল্প: ০১
এক জঙ্গলে দিব্যজ্ঞান নামে এক গাধা বাস করত। গাধাটি সবার সামনে দিয়ে এমন ভাবে হেঁটে যেত যেন মনে হতো সে সব জান্তা। আর সে এমন ভাব দেখাতো যেন পৃথিবীর এমন কোনো বিষয় নেই যা সে জানে না। একদিন জঙ্গলের বিশাল নিম গাছটার নীচে কয়েকটা ঘোড়া বসে গল্প করছে যে দিন দিন সূর্যের তাপ বেড়ে যাচ্ছে কেন!
আর এদের মাঝে উপস্থিত ছিল সে দিব্যজ্ঞান নামে গাধা। একটি ঘোড়া বলছে, পৃথিবীতে গাছপালার সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাই তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। দিব্যজ্ঞান সেই ঘোড়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে লাগল, একদম ঠিক, আমিও এটাই ভাবছিলাম গাছ কমে যাচ্ছে তাই তাপমাত্রা বাড়ছে।
আরেকটি ঘোড়া বলল, মেরু অঞ্চলের বরফ গুলো গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে যা সমস্ত প্রাণীকুলের জন্য বড্ড চিন্তার বিষয়। কথা বলা শেষ হতে না হতেই দিব্যজ্ঞান আবার সুর মিলিয়ে দিল, ইসসস ঘোরু ভাই তুমি তো আমার মুখের কথা ছিনিয়ে নিলে, তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এটাই বলতে চাইছিলাম।
এরপর আরেকটি ঘোড়া বলল, আজ গাছের সংখ্যা কমে গেছে বলে পৃথিবীতে বৃষ্টির পরিমানও অনেকটা কমে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ডোবা গুলিতে কাঁদা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই আর। আর এতে আমাদের জল খাওয়ার জন্য অনেকটা দূর সেই বিশাল ঝর্নার কাছে যেতে হচ্ছে। আর সেই ঝর্ণার জলৃ
ঘোড়াটির কথা শেষ হতে না হতেই গাধাটি বলতে লাগল, একদম ঠিক বলেছ ভাই। আমিও তোমাদের এটাই বলতে যাচ্ছিলাম যে, গাছের কারণেই বৃষ্টি কম হচ্ছে, আর তাই জল নেই ডোবা গুলোতে।
ঘোড়া গুলো কিছু বলে না, তারা কিছুক্ষণ চুপ করে যায়। কিছুক্ষণ পর একটি ঘোড়া গাধাটিকে বলল আচ্ছা দিব্যজ্ঞান ভাই তুমি তো দেখছি অনেক কিছুই জানো।
গাধা টি আবার গর্বের সাথে উত্তর দিল- সে আর বলতে, তোমরা কি নতুন করে চিনছ নাকি আমাকে। সাধেই কি আমার নাম দিব্যজ্ঞান! আমার কাজ দেখেই আমার নাম হয়েছে দিব্যজ্ঞান।
এরপর আরেকটি ঘোড়া বলল, আচ্ছা দিব্যজ্ঞান ভাই, আমি তো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার কেবল মাত্র একটি কারণ বললাম। এবার তুমি একটু বুঝিয়ে বলো তো, গাছ গুলো কেন কমছে!
গাধাটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, গাছগুলোর ব্যাপারে আমার মাথা খাটিয়ে কোনো লাভ নেই। আমার একটা জরুরী কাজ মনে পড়ে গেছে, আমি আসছি বরং। আর হুম যেহেতু তোমরা জানতে চাইলে গাছ কমে যাচ্ছে কেন, সেই কারণটা বিশ্লেষণ করতে গেলে রাত হয়ে যাবে। কিন্তু আমার হাতে আর অত সময় কোথায় বলো! আমি আজ বরং আসছি কেমন। অন্যদিন কথা হবে।
হুম আমাদের মাঝেও এরকম দিব্যজ্ঞান টাইপের মানুষের অভাব নেই, যারা ভাব দেখায় পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান সে যেন পকেটে নিয়ে ঘুরছে কিন্তু যখন তাকে তার জ্ঞানের ভাÐার সবার সমানে তুলে ধরতে বলা হয় সে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরকম মানুষদের আপনি কখনোই কথা দিয়ে হারাতে পারবেন না। কেননা তারা যেভাবেই হোক নিজেকে সর্বসেরা প্রমাণিত করার চেষ্টা করবেই।
গল্প: ০২
এক জঙ্গলে এক গাধা বাস করত। সকাল হলেই সে খাবারের সন্ধানে বেড় হতো এবং রাত হতেই সে তার আস্তানায় ফিরে যেত। এই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন।
এরকমই একদিন ঘুরতে ঘুরতে সে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গেলো যেখানে মাঝ দিয়ে চলে গেছে একটা বিশাল লম্বা রাস্তা আর রাস্তার দুইধারে রয়েছে এত্ত এত্ত লম্বা লম্বা ঘাস যা সেই গাধাটি সারাজীবনেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না।
সে দেখে অনেক খুশি হল, এবার সে আশেপাশেই একটি ভালো আস্তানার খোঁজ চালাতে লাগল। সে দেখল কাছেই একটি বড় গাছ রয়েছে, সেই গাছের নীচেই থাকা যাবে।
এরপর গাধাটি হাসিখুশি মনে, রাস্তার ওই পাশের ঘাস গুলি খেতে লাগল, খেতে খেতে তার চোখ গেলো এপারের ঘাস গুলির দিকে সে দেখল, এদিকের ঘাস গুলি বেশি ঘন আর বেশি তরতাজা দেখাচ্ছে। সে এপারের ঘাস গুলিতে ছুটে এসে খেতে লাগল।
সে আবার মাথা উঠিয়ে ওপারের ঘাস গুলির দেখল, সে দেখল না ওদিকের ঘাস গুলো বেশি সবুজ দেখাচ্ছে। সে আবার ওদিকে ছুটে গেল। কিন্তু সে আবার মাথা উঠিয়ে দেখল যে, উহু উহু এদিকের ঘাস গুলিই বেশি বড় বড় আর সবুজ। সে আবার এদিকের ঘাস গুলির দিকে ছুটে এলো।
এই ভাবেই কখনো এদিকের ঘাস গুলিতে আবার কখনো ওদিকের ঘাস গুলিতে ছুটাছুটি করতেই সেই দিনটি চলে গেল আর গাধাটি ক্লান্ত হয়ে পথের উপর বসে পরল।
এই ভাবেই প্রতিদিন সে কখনো এদিকের ঘাসে আবার কখনো ওদিকের ঘাসে ছুটে যেত, আর একসময় ক্লান্ত হয়ে রাস্তার উপর বসে পরত। আর এইভাবেই তার কোনদিকেরই ঘাস খাওয়া হয়ে ওঠে না। এই ভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে একটা সময় পর না খেয়ে ছুটোছুটি করে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে গাধাটি দুর্বল হয়ে পড়ে আর একটা সময় পর সে সেই রাস্তাটির উপর লুটিয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
আমাদের বাস্তব জীবনেও ঠিক এমনটিই ঘটে। অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবনের মূল্যবান সময়টা শুধু এটা ভেবেই কাটিয়ে দেয় যে, তাকে কোন দিকে যেতে হবে। সে কখনো এদিকে আবার কখনো ওদিকে ছুটতে থাকে। আর এই করতে গিয়ে মাঝখান থেকে সময় পেরিয়ে যায়, এরপর এমন একটি পর্যায়ে চলে আসে যখন আর কিছুই করার থাকে না।
আপনি কোন পথে যাবেন বা আপনার গন্তব্য কোথায় সেটা আপনি নিজে আগে ঠিক করুন। আর গন্তব্য ঠিক করার পর কখনো এদিকে ওদিকে তাকিয়ে সেগুলোর উদ্দেশ্যে ছুটে গিয়ে নিজের জীবনকে ব্যর্থ করবেন না। নিজের গন্তব্যে বেড়িয়ে আপনি যদি এদিক-সেদিক তাকান তাহলে আপনি নিজেই নিজেকে ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই দেবেন না। সময় সংক্ষিপ্ত, আর এই সময়ের মধ্যেই আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজের জীবনের একটি সঠিক দিশা আগে ঠিক করুন আর তারপর সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরুন, দেখবেন দিনান্তে আপনি ঠিকই পৌঁছে গেছেন।
মনে রাখবেন সূর্যাস্তের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য এটাই প্রমাণ করে যে, দিনের শেষটা সবসময় সুন্দর হয়। আর আপনার ক্ষেত্রেও সেটাই হবে, শুধু দরকার একটি নির্দিষ্ট দিশা বেঁছে নেওয়ার।