শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

সিরাজগঞ্জে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ৮ জন, ৭ বছর পর গ্রেপ্তার ৩

প্রতিনিধি: / ৩১৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

৭ বছর আগে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা (৮) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আটজন যুবক ও কিশোর মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে সুবর্ণাকে-তদন্তে এমনটাই বেরিয়ে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চৌহালী উপজেলার দত্তকান্দি গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে মো. ছাব্বির হোসেন (২০), একই গ্রামের আরফান মেম্বারের ছেলে মো. শাকিব খান (২১) ও বছির মেম্বারের ছেলে মিলন পাশা (২৭)। এদের মধ্যে ছাব্বির ও সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লোমহর্ষক এ ঘটনার বিবরণ জানান পিবিআইএর পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ সকালে চৌহালী উপজেলার মধ্য শিমুলিয়ার চর থেকে সুবর্ণার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সুবর্ণার বাবা মো. শুকুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন দেন। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর পিবিআই এসআই আশিকুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব নেন। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ এপ্রিল ভিকটিমের ফুফাতো ভাই মো. ছাব্বির হোসেনকে (২০) আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে ওইদিনই দত্তকান্দি শোলে বাজার থেকে আরফান মেম্বারের ছেলে শাকিব খানকে আটক করা হয়। এর আগে এ ঘটনার মূল নায়ক মিলন পাশাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তার ছাব্বির ও শাকিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে তারাসহ আরও ছয়জন দত্তকান্দি হাইস্কুল মাঠে যায়। সেখানে সুবর্ণাকে তার ফুফাতো ভাই ছাব্বিরের সঙ্গে খেলতে দেখে। তখনই তারা সুবর্ণাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিলন পাশা ও সাকিবসহ বাকি আসামিরা ছাব্বিরকে বলে তার মামাতো বোন সুবর্ণাকে মধ্যশিমুলিয়া চরে নিয়ে যেতে। সন্ধ্যার পর ছাব্বির ও শাকিব মিলে সুবর্ণাকে কৌশলে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বাকি আসামিরা অবস্থান করছিল। এরপর সুবর্ণার হাত-পা চেপে ধরে আটজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সুবর্ণা নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটি সবাইকে বলে দেওয়ার কথা বলে। এ অবস্থায় আসামিরা নিজেদের বিপদের কথা চিন্তা করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সুবর্ণার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর শরীরে মাটি ছিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পিবিআই এসপি আরও বলেন, ২৬ মার্চ বিকেলে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান দেখতে দত্তকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে যায় সুবর্ণা। পরিবারের লোকজন চিন্তা করে সুবর্ণা ওই স্কুলের পাশে তার ফুফুর বাড়িতেই আছে। এ জন্য খোঁজাখুঁজিও করে নাই। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়। পিবিআই তদন্তকালে সুরুতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখে সুবর্ণাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও তার গোপনাঙ্গে রক্ত দেখে তা আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরনের পোশাকে সিমেন্সের নমুনা পাওয়া যায়। এতেই নিশ্চিত হওয়া যায় সুবর্ণাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার সময় ছাব্বির, সাকিব ও অপর এক আসামির বয়স ছিল ১২ থেকে ১৩ বছর। বাকি আসামিরা যুবক ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।


এই বিভাগের আরো খবর