বিদেশ : রাশিয়ার একটি অত্যাধুনিক উৎক্ষেপণযান ব্যবহার করে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তিনটি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট সফলভাবে কক্ষপথে পাঠিয়েছে ইরান। গতকাল রোববার তেহরানের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে রাশিয়ার ভস্তোচনি কসমোড্রোম থেকে সয়ুজ রকেটের মাধ্যমে এই মাল্টি-পেলোড মিশনটি পরিচালনা করা হয়। ইরানের মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাঠানো এই স্যাটেলাইট তিনটির নাম হলো জাফর-২, পায়া এবং কাওসার। এটি নিয়ে ইরান তাদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কার্যক্রমে মোট সাতবার রাশিয়ার রকেট ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা গ্রহণ করল। এই মিশনের সফল সমাপ্তিকে তেহরান ও মস্কোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান মহাকাশ সহযোগিতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকরা। মস্কোতে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এই মিশনকে ইরানের মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এঙ্ েদেওয়া এক বার্তায় তিনি জানান যে, স্যাটেলাইটগুলো সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে ইরানের সরকারি সংস্থা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জ্ঞানভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানিগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে। যদিও উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটি রাশিয়ার সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে, তবে নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণের প্রতিটি ধাপ ইরানি বিজ্ঞানীরা দেশেই সম্পন্ন করেছেন। জালালি আরও উল্লেখ করেন যে, এই তিনটি স্যাটেলাইটের মধ্যে দুটি সরকারি খাতের এবং একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগের ফসল, যা ইরানের মহাকাশ গবেষণায় বৈচিত্র্য আসার ইঙ্গিত দেয়। কক্ষপথে স্থাপিত তিনটি স্যাটেলাইটের মধ্যে পায়া বা তোলু-৩ হলো ইরানের নির্মিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভারী পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট, যার ওজন প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম। এটি মূলত পৃথিবী পর্যবেক্ষণের কাজ করবে। অন্যদিকে জাফর-২ স্যাটেলাইটটি ইরান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্তৃক নির্মিত, যা প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যবেক্ষণ, পরিবেশের অবস্থা মূল্যায়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং নির্ভুল মানচিত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। এ ছাড়া কাওসার ১.৫ স্যাটেলাইটটি এর আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত, যাতে ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি সক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে। এটি স্মার্ট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম হবে। ২০০৯ সালে ‘ওমিদ’ নামক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইরান প্রথমবারের মতো মহাকাশ যুগে প্রবেশ করেছিল। পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান ধারাবাহিকভাবে তাদের বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। সমালোচকদের মতে, ইরানের এই মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়নের পেছনে প্রতিরক্ষা কৌশলের যোগসূত্র থাকতে পারে, যদিও তেহরান সবসময়ই একে সম্পূর্ণ বেসামরিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা হিসেবে দাবি করে আসছে। রাশিয়ার সঙ্গে এই সফল উৎক্ষেপণ পারমাণবিক ও মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের কৌশলগত মিত্রতাকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র: ইরনা ও মেহের নিউজ