সর্বশেষ :
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বাগেরহাটে পূর্ব বিরোধের জেরে সশস্ত্র হামলা, দুই ভাইসহ আহত ৫

প্রতিনিধি: / ৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নে পূর্ব বিরোধের জেরে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই ভাইসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার ১০ নং ডেমা ইউনিয়নের খেগড়াঘাট এলাকায়।
আহতরা হলেন—অহিদুল মোল্লা (৪৪), মহিদুল মোল্লা (৩৬), চা দোকানি জুয়েল মল্লিক, পথচারী সুমন মোল্লা ও তুহিন মোল্লা। গুরুতর আহত অবস্থায় অহিদুল ও মহিদুল মোল্লাকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহতদের পিতা হাসমত মোল্লা (৭০) বাদী হয়ে বাগেরহাট সদর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় অহিদুল ও মহিদুল মোল্লা খেগড়াঘাট এলাকায় জুয়েল মল্লিকের চা দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে মুরাদ মল্লিক, এরশাদ শেখ, শুকুর আলী শেখ ও আদম আলী শেখসহ ১০–১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল দা, রামদা, হাতুড়ি, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ঘটনাস্থলে আসে। পরে তারা দুই ভাইকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
প্রাণ বাঁচাতে দুই ভাই চা দোকানের ভেতরে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় এরশাদ শেখ হত্যার উদ্দেশ্যে মহিদুল মোল্লার মাথায় রামদা দিয়ে একাধিক কোপ দিলে তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার মাথায় প্রায় ২০টি সেলাই দিতে হয়। অপরদিকে শুকুর আলী শেখ অহিদুল মোল্লার কপালে কোপ দিলে তার মাথায় গুরুতর জখম হয় এবং চারটি সেলাই দিতে হয়।
হামলা ঠেকাতে এগিয়ে এলে চা দোকানি জুয়েল মল্লিককে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তার দাঁত ভেঙে যায় এবং মুখে গুরুতর জখম হয়। এছাড়া পথচারী সুমন মোল্লা ও তুহিন মোল্লাকেও হাতুড়ি দিয়ে মারধর করে আহত করা হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলার সময় মহিদুল মোল্লার ভিভো ওয়াই-২১ মডেলের একটি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সুমন মোল্লার হাত থেকে একটি রুপার ব্রেসলেট লুট করা হয়।
স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতনের শিকার তরুণ ডাকুয়া বলেন, “আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। মুরাদ আমাদের নিয়মিত হুমকি দিয়ে জমিজমা দখলের চেষ্টা করছে। জীবিকার জন্য সামান্য যে জমিটুকু আছে, তা থেকেই আমরা কোনোমতে চলি। এখন খাল দখল করে পানি সেচ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। এতে বাধা দিলে আমাদের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে চাই।
ঘটনার বিষয়ে আহতদের পিতা হাসমত মোল্লা বলেন, মুরাদ ও মিলনের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেদের মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। ছেলেদের বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়। আমি বারবার অনুরোধ করেছি—ছেলেদের মারো না, আমাকে মারো—কিন্তু তারা শোনেনি। বরং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। মিলনের ছেলেরাই আমাদের এই অবস্থার জন্য দায়ী। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আহত চা দোকানদার জুয়েল মল্লিক বলেন, ওহিদুল ও মহিদুল আমার দোকানে চা খাচ্ছিল। হঠাৎ মিলনের তিন ছেলে দোকানের ভেতরে ঢুকে তাদের মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিলে আমাকেও হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করা হয়। আমার দাঁত ভেঙে গেছে, দোকান ভাঙচুর করে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। আমি নিরীহ দোকানদার, এর ন্যায়বিচার চাই।
খেগড়াঘাট ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, খাল দখল ও নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ নিয়ে আগে বিচার বসিয়ে জরিমানা ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছিল। বিষয়টি জেলা নেতৃবৃন্দকেও জানানো হয়েছে।
ডেমা ইউনিয়ন ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নিয়ামুল কবির রসুল বলেন, মাগুর আলী খালে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ হয়েছে। মিলন শেখ দলবল নিয়ে এসে মহিদুল ও ওহিদুল মোল্লাকে মারধর করে। তার বিরুদ্ধে আগেও মাছ চুরির অভিযোগে জরিমানা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুম খান বলেন, খাল নিয়ে মারামারির একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এই বিভাগের আরো খবর