শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বন্যা কবলিত ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় নতুন করে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

প্রতিনিধি: / ১৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিদেশ : নতুন করে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, বন্যা কবলিত ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়িয়েছে। দেশ দুটি ইতোমধ্যেই বন্যা কবলিত। এর আগে, চারটি দেশে এই বন্যায় ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থা গতকাল বৃহস্পতিবার সতর্ক করে দিয়েছে যে সুমাত্রা দ্বীপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি প্রদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ‘মাঝারি থেকে ভারী’ বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হলেও, তা এখনও গত সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা ৭৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম। যদিও দূরবর্তী এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়, এখনও মৃত মানুষের সকল তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় ৫৬০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখন সকলের অবস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উত্তর সুমাত্রার পান্ডানের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৪ বছর বয়সী সাবান্দি এএফপিকে বলেন, গত সপ্তাহে বন্যার কারণে তার বাড়ি কাদাপানিতে ভেসে যাওয়ায় তিনি এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। নতুন করে ফের বৃষ্টিপাত হলে পারে— এই পূর্বাভাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা আবার নতুন করে ভয় পাচ্ছি।’ সাবান্দি বলেন, ‘আমরা এই ভয় পাচ্ছি যে হঠাৎ করে ফের ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে, আবারও বন্যা হবে।’ এই পৌঢ় খাবার বা পানি ছাড়াই তার ছাদে দুই দিন ধরে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। বন্যার আগে তিনি নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারেননি বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আমার ঘর কাদাপানিতে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কাদা এত বেশি ছিল যে আমরা ঘরে ঢুকতেও পারিনি।’ যদিও এশিয়া জুড়ে মৌসুমি বর্ষা বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঘটনাকে আরও অনিয়মিত, অপ্রত্যাশিত ও মারাত্মক করে তুলছে। গত সপ্তাহে বড় ধরনের দুটি পৃথক ঝড় শ্রীলঙ্কা, সুমাত্রা, দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কিছু অংশ ও উত্তর মালয়েশিয়ায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করেছে। দুর্যোগের এই মাত্রা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচেহ-তে এএফপি’র একজন প্রতিবেদক বলেছেন যে একটি গ্যাস স্টেশনে জ্বালানির জন্য লাইন প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে। অন্যত্র, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা খাদ্য ঘাটতি, মূল্যবৃদ্ধি ও লুটপাটের খবরও পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কায়, আবহাওয়া পূর্বাভাসকারীরা জানিয়েছেন যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মধ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, আরও বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যেই ভিজে নরম হয়ে যাওয়া ঢালগুলো ধসে পড়তে পারে। কলম্বো থেকে ক্যান্ডি পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার (৭১ মাইল) প্রধান মহাসড়কটি প্রতিদিন ১৫ ঘন্টার জন্য পুনরায় খোলা হয়েছে, কারণ শ্রমিকরা মাটি ও পাথরের ঢিবি অপসারণ করেছে। অনেক স্থানে গাড়ি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা পেরোতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় কমপক্ষে ৪৭৯ জন মারা গেছে এবং এখনও পর্যন্ত আরও শত শত লোক নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে আবেদন করেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণে ৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মাত্র তিন বছর আগের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে থাকা এই দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কলম্বোর উপকণ্ঠে অনেকেই এখনও পানিভর্তি ঘর পেরিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ৬৯ বছর বয়সী সোমা ওয়ানিয়ারাচ্চি যতক্ষণ সম্ভব তার বাড়িতেই ছিলেন। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘কিন্তু যখন পানির স্তর প্রায় আট ফুট (২.৫ মিটার) পৌঁছে যায়, তখন আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ কলম্বোর কাছে গ্রাম কোটুউইলায় ফিরে সোমা তার ক্যাটারিং সরঞ্জাম ভাড়া ব্যবসার ক্ষতি দেখে হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার স্টেইনলেস স্টিলের বাসনপত্র এখন সম্ভবত ভারত মহাসাগরে ভাসছে।’

 


এই বিভাগের আরো খবর