শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গাঁজা বিক্রিতে নিষেধ করায় সাম্য খুন হন

প্রতিনিধি: / ৬ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মামলায় সাত জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আখতার মোর্শেদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছি। চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন। এরা সবাই মাদক কারবারী বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া আসামিরা হলেন- তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার এবং সুজন সরকার।

গত ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে রাত ১১টার দিকে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।তদন্তকারী কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- আসামি মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। মেহেদী তাদের দলনেতা।

তারা মেহেদীর কাছ থেকে মাদকদ্রব্য গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে মন্দির গেট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে। বিক্রি শেষে সবাই মেহেদীর কাছে টাকা জমা দিতো। ঘটনার পূর্বে আসামি রিপন ও রাব্বি, মেহেদীকে ঠিকমত গাঁজা বিক্রির টাকা না দিয়ে বলে তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা কিছু মাস্তানরা জোর করে নিয়ে যায়। যার কারণে তারা মেহেদীকে নিয়মিত গাঁজা বিক্রির টাকা দিতে পারে না।

এরকম পরিস্থিতি হলে মেহেদী তখন সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করার জন্য বলে এবং কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেয়। মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনরা যেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রি না করে সেজন্য সাম্য ও তার বন্ধুরা নিষেধ করেছিল। এর কারণেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বি প্রতিদিনের মতো গাঁজা বিক্রি করছিল। তখন তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। মেহেদীর ছত্রছায়ায় কবুতর রাব্বি ট্রেজারগান এবং সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময় চলাফেরা করে ও মাদক বিলি করে।

কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময় থাকতো। রাতে সাম্য একটি মোটর সাইকেলে তার দুই বন্ধুসহ মুক্ত মঞ্চের দিকে এলে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলে। রাব্বি তখন মুক্ত মঞ্চ থেকে ৩০/৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোল পুকুর (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য তাকে মোটরসাইকেলে করে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন ট্রেজারগানটি না দিলে সাম্য, রাব্বিকে চড়-থাপ্পর মারে।

রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্কা-তর্কি ও হাতা-হাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর একটি মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন মোটরসাইকেলের একজন (পলাশ সর্দার) তাদের অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলে।

মেহেদী মোটরসাইকেলের সেই ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। তা দেখে তাদের সঙ্গে থাকা অপর একজন (সম্রাট মল্লিক) এগিয়ে গেলে মেহেদী তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে তাকে ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করে, এতে সে মাটিতে পড়ে যায়।

একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতা-হাতিতে জড়িত পাপেলকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মেহেদী ভিকটিম সাম্যর বুকে ঘুষি মারে এবং কবুতর রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে সে সাম্যর ডান পায়ের রানে চাকু মারলে সেও মাটিতে পড়ে যায়।


এই বিভাগের আরো খবর