লন্ড্রির দোকান, বিশেষ করে এলাকার মধ্যে যেটা আছে সেটার লোকজন যে এমন ভয়ংকর হতে পারে, আগে টের পাইনি।
ঘটনা তেমন কিছু না, আবার তেমন কিছুও!
আমি বাসার কাজকর্ম তেমন একটা করি না বা করতে পারি না এটা বাসার ম্যাডাম একরকম মেনেই নিয়েছিলেন। হঠাৎ কী হলো! ম্যাডাম খেপে গেলেন।
‘বাসার কোনো কাজ করবে না? রসিকতা পেয়েছ? চাকরি শুধু তুমিই করো? আমি করি না? আমি যদি চাকরি করার পাশাপাশি ঘরের কাজ করতে পারি তুমি পারবে না কেন?’
একদমে অনেকগুলো প্রশ্ন, আমি স্পিকটি নট। ভাবছি, হঠাৎ কী হলো?
ম্যাডাম বিছানার ওপর এক গাদা কাপড় ধুপ করে রেখে বললেন,
‘এই নেন স্যার, কাপড় ধোওয়া হয়েছে। এইবার ইস্ত্রি করার জন্য যেগুলো পাঠাবে সেগুলো আলাদা করো। এই যে ব্যাগ দিলাম, এইটাতে ভরো! ভরে কাশেদের হাতে দাও’
আমি বরাবর যা করি সেটাই করলাম। উদাস ভাব নিয়ে গুনগন করে ‘ইফ ইউ মিসড দ্য ট্রেন আই’ম অন…’ ভাজতে ভাজতে ৫০০ মেইল দূরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আস্থা আছে, কাপড় ভরা ব্যাগ আমার গাড়িচালক কাশেদের হাতে ঠিকই যাবে। কাশেদ সেটা লন্ড্রি দোকানের লোকের হাতে পৌঁছাবে। নিজের থেকে টাকাটা লন্ড্রির লোককে দিয়ে আসবে এবং রাতে গাড়ি বন্ধ করে চাবি দিতে এসে ইস্ত্রি করা কাপড়ের ব্যাগটা হাতে দিয়ে বলবে, ‘স্যার এত পিস! এত টাকা দ্যান!’
জানি, এই কাজ আমি না করলেও দয়ার শরীর ম্যাডাম আমার হয়ে করে দেবেন! ইস্ত্রি করার কাপড়গুলো বাছাই করে ব্যাগে তো ভরবেই, লন্ড্রিতে পাঠানোর ব্যবস্থাও করবে।
আমার বিশ্বাস কখনও ভুল হতে পারে না আবার প্রমাণিত হলো। রাতে গাড়ির চাবি দেয়ার সময় কাশেদ হাত বাড়িয়ে ইস্ত্রি করা কাপড়ের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
স্যার, ১৩ পিস, একশ ছাপ্পান্ন টাকা দ্যান!
গাড়ির চাবি নিয়ে একশ ছাপ্পান্ন টাকার জায়গায় একশ সত্তর টাকা কাশেদের হাতে দিয়ে ওকে বিদায় করলাম। টাকা হাতে নিতে নিতে কাশেদ কি একটু মুখ টিপে হাসল? ঠিক ধরতে পারলাম না।
এরপরের কাজ হলো ইস্ত্রি করা কাপড় আলাদা করা। যেগুলো আমার সেগুলো রেখে রুহামেরগুলো তার রুমে দিয়ে আসা। সত্যি বলছি, এই কাজটা আমি করি।
ব্যাগ থেকে কাপড়গুলো বের করলাম। ইস্ত্রি করা কাপড় একটার ওপর একটা সাজানো। একটা চিকন লাল সুতা দিয়ে সবগুলো বেঁধে দেয়া। কাপড় আলাদা করছি
১) প্যান্ট- ২ পিস
২) ফুল শার্ট- ২ পিস
৩) হাফ শার্ট- ৩ পিস
৪) পাঞ্জাবি- ১ পিস
৫) থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট (যেটা পরে আমি রাতে ঘুমাই)- ১ পিস
৬) চায়ের দাগ লাগা গোল গলা গেঞ্জি (বাসায় মেহমান এলে যেটা দ্রুত বদলে অন্য গেঞ্জি পরি)- ১ পিস
৭) মোজা (প্রতি পায়েরটা এক পিস ধরে)- ৩ পিস
কাপড় আলাদা করতে করতে টের পেলাম কাশেদের মুখ-টিপা হাসি আমি ঠিকই দেখেছিলাম! কাণ্ড দেখে ধপ করে মাথা গরম হয়ে হয়ে গেল! গলা চডিয়ে বললাম ‘এইসব গেঞ্জি, মোজা ইস্ত্রি করার জন্য কে পাঠিয়েছে?’
ম্যাডাম শান্ত গলায় বললেন ‘এখন থেকে এমনই হবে!’
‘এমনই হবে মানে কী?’ রাগ শিফট হলো লন্ড্রির লোকের ওপর।
‘বাসা থেকে ভুলে গেঞ্জি, মোজা, আন্ডারওয়্যার লন্ড্রিতে চলে গেল আর ওরা সেগুলা ইস্ত্রি করতে শুরু করে দিলো? এই ব্যাটা বাপের জন্মে কোনোদিন কাউরে দেখছে ইস্ত্রি করা মোজা পরতে? ইস্ত্রি করল তো করল! শার্ট-প্যান্টের মত গেঞ্জি-মোজা ইস্ত্রিও পার পিস ১২ টাকা! ফাইজলামি!’