ভোরের টানা তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শহর। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আমবাগান আবহাওয়া অফিস। আর শেষ ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮১ মিলিমিটার।
ভারি বর্ষণে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, চান্দগাঁও আবাসিক, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হালিশহর, নন্দীরহাটসহ বহু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। দোকানপাট, বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি।
সকালে মুরাদপুর এলাকায় রাস্তায় পানি জমে সড়ক যানচলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পাশের চশমা খালের পানি উপচে পড়ে রাস্তায়। বহদ্দারহাটের স্বজন সুপার মার্কেটের দোকানগুলোর ভেতরে পানি জমে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেখানে ব্যবসা করা গিয়াস উদ্দিন জানান, “নালার ওপর স্থাপনা ভাঙার পরও পানি নামার বিকল্প পথ তৈরি হয়নি, ফলে আজ আবার জলাবদ্ধতা হয়েছে।”
বৃষ্টির প্রভাব শুধু জলাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, শহরের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগেও বিঘ্ন ঘটে। সকাল ৬টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামি সড়কের স্টার শিপ এলাকার শীতল ঝর্ণা খালের ওপরের পুরনো সেতুটি ধসে পড়ে। ফলে সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্য পাশে চলা গাড়িগুলো একই লেনে আসতে বাধ্য হওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এই সড়কটি রাউজান, হাটহাজারী, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িগামী যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তোলে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিফাতুল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, “সেতুটি ১৯৮০ সালের দিকে তৈরি করা হয়। এটি বহু পুরনো ইটের কাঠামো ছিল। অতিরিক্ত পানির চাপে তা ভেঙে গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।”
নগরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বর্ষা মৌসুমে একই ধরনের জলাবদ্ধতা হলেও কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ছে না। পুরনো খাল ও নালাগুলোর সংস্কার, পানি নিষ্কাশনের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং স্থায়ী অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়—এমনই মত স্থানীয়দের।