সর্বশেষ :
ফলোআপ: পাইকগাছায় কোটিপতির ভবন রক্ষায় সড়ক সরলীকরণ না হয়ে হচ্ছে বাঁকা: নকশা পরিবর্তন ও মাদ্রাসা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন পাইকগাছায় আমন ধানের ফলন ভাল হলেও ধানের মূল্য কম হওয়ায় কৃষক হতাশ ডেইলি স্টার অফিসে হামলা-ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয় ভাংচুর করে নথিতে আগুন দিলো বিক্ষুদ্ধ জনতা হাদি হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার শাহবাগ অবরোধ চট্টগ্রামে রাতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে হামলা, আটক ৮ ছায়ানটের ভেতরে পোড়া বই আর ভাঙা বাদ্যযন্ত্র, বাইরে কড়া পুলিশ পাহারা আজ সন্ধ্যায় দেশে আসবে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ, জানাজা শনিবার জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতারা লুকানো কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে ইউক্রেন
শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে সবুজ সংকেত পেল

প্রতিনিধি: / ১০১ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে আলোচনার প্রথম দিনেই আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির বার্তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হওয়া তৃতীয় দফা বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এই বার্তা পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলা আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তারা বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, শুল্ক কমানো হবে—এমন স্পষ্ট ইঙ্গিত তারা পেয়েছেন।

ওয়াশিংটন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের বাণিজ্য সচিব জানান, “আমাদের ওপর আরোপিত শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে বলে মনে হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট হার এখনই বলা যাচ্ছে না। বুধবার (৩০ জুলাই) এবং বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হতে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দলে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। যদিও ৯ এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, তবে ৮ জুলাই বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা আসে, যা বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এই শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২-২৩ শতাংশ পর্যন্ত, এবং সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হতে পারে। এতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত—গার্মেন্টস, চামড়া ও হালকা প্রকৌশল—মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় পাল্টা শুল্ক কমাতে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমন্বয়ে নেমেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে, শুধু রপ্তানিই নয়, আমদানিও বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ একটি অবস্থানপত্র পাঠায় ইউএসটিআর দপ্তরে। সেই কাগজের আলোকে এই তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গও গুরুত্ব পেয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। এই তুলনাই যুক্তরাষ্ট্রকে নমনীয় হতে সহায়তা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শুল্ক কমানোর আশ্বাস আদায়ে বাংলাদেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার পরিকল্পনা, বছরে ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, এলএনজি, তুলা, সয়াবিন, সামরিক যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার পরিকল্পনা। সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে আরও ২.২০ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব ইতোমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও আলোচনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলসহ শীর্ষ আমদানিকারক কোম্পানির প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, যারা সরাসরি মার্কিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তি করছেন। তাদের টার্গেট ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি।

অন্যদিকে, ইউএসটিআর এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। যেমন, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার নির্ধারণ হয়েছে ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশকেও এই পরিসরের মধ্যে রাখা হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে।

এই আলোচনার শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই)। ওই দিনই স্পষ্ট হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য কী হারে শুল্ক নির্ধারণ করছে এবং সেই সিদ্ধান্ত ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে কি না। তবে আলোচনা ইতিবাচক হওয়ায় সরকারের পাশাপাশি রপ্তানিকারকরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।


এই বিভাগের আরো খবর