শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে চান? এই নসিহতগুলো বদলে দেবে জীবন

প্রতিনিধি: / ২০ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫

ইসলাম শুধু ইবাদতের ধর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যেখানে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা-একে ইবাদতের চেয়েও বড় করে বিবেচনা করা হয়েছে। মানুষ অনেক সময় ধারণা করে, বেশি বেশি নফল নামাজ, রোজা বা ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া যায়। অথচ ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচানোই সবচেয়ে বড় ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান উপায়। গুনাহ থেকে দূরে থাকা মানে হচ্ছে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা, শয়তানের প্রলোভন থেকে বাঁচা, এবং প্রকৃত আল্লাহভীরু হওয়া। সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন এবং বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনচর্চায় এর অসংখ্য উদাহরণ আমরা পাই, যা আমাদের এ শিক্ষা দেয় যে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাই প্রকৃত তাজকিয়াহ এবং আত্মার পবিত্রতা। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,
لَا أَعْدِلُ بِالسَّلَامَةِ شَيْئًا
গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রেখে চলার সমকক্ষ আমি আর কোন আমলকে জ্ঞান করতে পারি না। (আদাবুদ দুনয়া ওয়াদ দীন ১/৯৮)

মানে সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে পারা। অন্য কোন নফল ইবাদত তার সমকক্ষ হয় না। উল্লেখ্য গুনাহ মুক্ত জীবন যাপনের প্রশিক্ষণ দান এবং দুনিয়ায় গুনাহমুক্ত ভাবে চলার যোগ্য মানুষ তৈরির জন্যই মূলত রাসূলে পাক সা.কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন,
مَا عَبَدَ الْعَابِدُونَ بِشَيْءٍ أَفْضَلَ مِنْ تَرْكِ مَا نَهَاهُمُ اللَّهُ عَنْه
আবিদ লোকেরা যে সব নফল ইবাদত করে থাকেন তম্মধ্যে আল্লাহ কর্তৃক নিষেধকৃত জিনিসগুলি (যেমন হারাম, মাকরূহ, খেলাফে সুন্নাত ইত্যাদি কাজ) থেকে বেঁচে থাকার চাইতে উত্তম কোন ইবাদত হয় না। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ২৯৬)

গুনাহের কাজ ত্যাগ করা ছাড়া ‘আল্লাহর ওলি’ তথা আল্লাহর বন্ধু হওয়া যায় না। বেলায়েতের দপ্তরে নিজ নাম লিপিবদ্ধ করতে হলে আগে গুনাহের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে ত্যাগ করতে হয়। আল্লাহ পাকের সাথে নাফরমানী আর তাঁর বেলায়েত (বন্ধুত্ব) একত্রে থাকতে পারে না। আল্লাহ পাক আমাদের তওফীক দান ফরমান। একারণেই
বুযর্গানে দীন বলেছেন,
لايُوصِل إلى ولايَةِ الله إلا بترك الْهَوَى খাহেশাতের পরিত্যাগ ব্যতীত বেলায়েতের মাকামে পৌঁছার সুযোগ নেই। অতএব আল্লাহর ওলি হতে হলে গুনাহ আপনাকে ছাড়তেই হবে। এ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। হাদিসে পাকে হযরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন,
اتَّقِ المَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ
তুমি গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করো এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো; তাহলে তুমি (ক্রমে) জগতের সবচেয়ে বড় অলি ও সর্বোচ্চ বুযর্গীর মাকামে পৌঁছে যেতে পারবে। (তিরমিযী ২৩০৫)

অপর হাদিসে এসেছে, একবার সায়্যিদা হযরত আয়েশা রাযি. নবীজি-কে বলে ছিলেন; ইয়া রসুলাল্লাহ! আল্লাহর বান্দাদের অনেকে রাত জেগে কতেইনা ইবাদত করেন। আমরা মহিলারা তো দুর্বল প্রকৃতির। রাত জেগে ইবাদত আমরা করতে পারি না। নিদ্রা আমাদেরকে পরাজিত করে দেয়। ফলে আমাদের জন্য তো পেছনে পড়ে থাকতে হবে।

তখন নবী আ. তাকে সান্ত্বনা নবীজি দিয়ে বললেন,
مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْبِقَ التائِبَ الْمُجْتَهِدَ فَلْيَكُفَّ عَنِ الذُّنُوبِ
যে ব্যক্তি পর‌্যাপ্ত ইবাদত ও তাওবাকারীর চাইতেও নিজকে অগ্রনী করে রাখতে চায় সে যেন সর্বপ্রকার গুনাহ ও নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকার নীতি কঠিনভাবে মেনে চলে। অর্থাৎ যদি তুমি গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারো তাহলে রাত জেগে ইবাদতকারী বান্দার চাইতেও তুমি সম্মানের দিক থেকে আগে থাকতে পারবে। (মুসনাদ আবু ইয়া’লা ৪৯৫০)

সর্বোপরি, গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা নিছক এক ইবাদত নয়-বরং তা ঈমানের পরিপূর্ণতার প্রমাণ এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একমাত্র পথ। যিনি গুনাহ থেকে বেঁচে চলেন, তিনি আল্লাহর প্রেমে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন। তিনি রাতজাগা মুত্তাকীদের চাইতেও মর্যাদাবান হতে পারেন, যদি সত্যিকারভাবে গুনাহ বর্জন করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এমন অন্তর দিন, যা গুনাহকে ঘৃণা করে, এমন আত্মা দিন, যা তাঁর অবাধ্যতা থেকে কাঁপে, এবং এমন জীবন দিন, যা তাঁর সন্তুষ্টির পথে অবিচল থাকে। আমিন।


এই বিভাগের আরো খবর