বিদেশ : বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ শিশু একবারও কোনো টিকা পায়নি। মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফের যৌথ প্রতিবেদনে এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি ১৯৫টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে শিশুদের নিয়মিত টিকাদানের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। খবর: সিএনএন ও রয়টার্স। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও সংখ্যাটি এখনো উদ্বেগজনক। এছাড়া আরো ৫৭ লাখ শিশু সম্পূর্ণ ডোজ পায়নি। ডব্লিউএইচও এর টিকাদান বিভাগের পরিচালক ড. কেট ও’ব্রায়েন বলেন, ‘আমরা এমন এক কঠিন দেয়ালে পৌঁছেছি, যেটা ভাঙা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল ও দুর্যোগপীড়িত দেশে শিশুদের টিকাদান সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে। সংকটাপন্ন ২৬টি দেশে বসবাসরত শিশুদের টিকা না পাওয়ার সম্ভাবনা স্থিতিশীল দেশের শিশুদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নাইজেরিয়া, ভারত, সুদান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও অ্যাঙ্গোলাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা মোট বঞ্চিতের প্রায় ৫২ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোতে যদিও টিকা সহজলভ্য, তথাপি টিকাদানে অনীহা ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় হামের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও টিকা অনীহার কারণে হামের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. ইফ্রেম লেমাঙ্গো বলেন, ‘গত ৫০ বছরে টিকা অন্তত ১৫ কোটির বেশি প্রাণ বাঁচিয়েছে। তবুও ভুল তথ্য, ভীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলছে।’ বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে মূল সমস্যা হলো সেখানে টিকা সহজলভ্য নয়। যুদ্ধক্ষেত্র, দুর্গম অঞ্চল ও দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামোর কারণে বহু শিশু টিকা পায় না। ড. ও’ব্রায়েন বলেন, ‘বেশিরভাগ শিশু টিকা পাচ্ছে না, কারণ সেবা পৌঁছায় না। অনেকে এমন জায়গায় থাকে যেখানে সরকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।’ ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আদানম গেব্রেয়েসুস বলেন, ‘টিকা নিয়ে ভুল তথ্য ও আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া গত কয়েক দশকের অর্জনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এখনই সময়, আমরা যেন স্থানীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করি, বাজেট বৃদ্ধি করি সব শিশুকে এই জীবনরক্ষাকারী সুরক্ষা পৌঁছে দিতে পারি।’ তবে সব খারাপ খবরের মধ্যেও কিছু আশার আলো আছে। এই বছর নারীদের জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে ব্যবহৃত এইচপিভি টিকার প্রসারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৪ সালে মেয়েদের প্রথম ডোজ নেয়ার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশ, যেখানে ২০২৩ সালে তা ছিল ২৭ শতাংশ আর ২০২২ সালে মাত্র ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও আরো চারটি দেশে এইচপিভি টিকা চালুর ফলে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৯ শতাংশ শিশু ডিপথেরিয়া, টিটানাস ও পারটুসিস প্রতিরোধী ডিপিটি টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে—যেটি গত দুই বছরের মতোই স্থিতিশীল। তবে ২ কোটি ৬ লাখ শিশু এখনো হামের প্রথম ডোজ থেকে বঞ্চিত। দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তির হার কিছুটা বেড়ে ২০২৪ সালে হয়েছে ৭৬ শতাংশ, যা ২০২৩ ও ২০২২ সালে ছিল যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ৭৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী শৈশবকালীন টিকাদান কার্যক্রম ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তবুও বিশেষজ্ঞদের আহ্বান, এই অগ্রগতি ধরে রাখতে এবং আরো শিশুদের বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি। ‘একটি শিশুও যদি টিকা না পেয়ে মারা যায়, সেটি মানবতার পরাজয়’ বলে জানান ড. ড্যান ব্যারুচ।