মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

লাল চাঁদ হত্যা ব্যবহার হচ্ছে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নের অজুহাত হিসেবে : মির্জা ফখরুল

প্রতিনিধি: / ৯ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, লাল চাঁদ হত্যার ঘটনা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, বিশেষ কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অনিশ্চিত করতে এবং রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত করতে এই হত্যাকাণ্ডকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তাঁর সন্দেহ। তিনি বলেন, “একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।”

তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ উদঘাটনে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সত্য উদঘাটনের পাশাপাশি জনগণকে অবহিত করবে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কোনোভাবে প্রতিহত না হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও হামলাকারীরা সহজেই পালিয়ে যেতে পারায় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “প্রকাশ্য দিবালোকে, অসংখ্য মানুষের সামনে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকটবর্তী অবস্থান থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিরোধ না হওয়া পুরো ঘটনাটি ঘিরে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রাখে।”

তিনি অভিযোগ করেন, ৯ জুলাই সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর ‘প্রাইম টাইমে’ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তার মতে, নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি ফটোকার্ড অনলাইনে ছড়ানো হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে হত্যাকাণ্ডের খবর প্রচারকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর আয়োজন আগেই ছিল।

পুলিশ জানায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে সোহাগের মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেছেন, যেখানে ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ নেতা-কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃতরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু এবং ছাত্রদলের চকবাজার শাখার সদস্য সচিব অপু দাস ও মাহমুদুল হাসান মাহিন।

তবে বিএনপি মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেন, “অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।” তিনি অভিযোগ করেন, “শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চরিত্রহননের চেষ্টা হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

মির্জা ফখরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ও তার শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন জনগণের মনে উদয় হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সঙ্গে অগ্রসৈনিক ছিল, সেই তারুণ্যের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ আমরা করছি। ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


এই বিভাগের আরো খবর