ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে পড়ে সাঞ্জু বাড়াইক নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। সোমবার (১৫ জুলাই) ভোরে ভবনের নিচে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার আগে রাত ১২টা ৮ মিনিটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাসে ক্ষমা চেয়ে একটি আবেগঘন বার্তা দিয়ে যান সাঞ্জু।
২৩ বছর বয়সী সাঞ্জু বাড়াইক ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জগন্নাথ হলের আবাসিক। তাঁর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়।
সাঞ্জুর ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি। উল্টো মানুষকে দোষারোপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি, আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি, নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোনো ক্ষতি হলে সে দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
হলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাঞ্জু রাত সাড়ে তিনটার দিকে হলে প্রবেশ করেন। এরপর কিছুক্ষণ কক্ষের সামনে অবস্থান করে সকাল ৫টা ৩৬ মিনিটে ছাদ থেকে লাফ দেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ছাদে একা বসে ছিলেন তিনি।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেবাশীষ পাল জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একজন প্রথম মরদেহটি দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হয় এবং দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ মো. মাসুদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মুনসুর জানান, এটি আত্মহত্যা কিনা সে বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার সম্ভাবনা থাকলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য উদঘাটনে সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা আরও বিস্তৃতভাবে বিবেচনায় আনা হবে।”
প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল আরও জানান, সাঞ্জুর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সে কিছুদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। মৃত্যুর দুই দিন আগেও সে হলে ছিলেন না।
একজন সম্ভাবনাময় তরুণের এমন মৃত্যুতে ঢাবি ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাঞ্জুর শেষ স্ট্যাটাস ঘিরে গভীর আবেগ প্রকাশ করছেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থার জোরদার দাবি তুলছেন।