• মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৯:০৪

প্রথমবার পশুর হাটে যাওয়ার আগে যেসব বিষয় লক্ষ রাখতে হবে

প্রতিনিধি: / ৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ১ জুন, ২০২৫

ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে পশুর হাট বসে গেছে ইতোমধ্যেই। কোরবানির জন্য পছন্দের পশুটি কিনতে প্রতি বছর হাটে যান হাজারো মুসলমান। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রথমবারের মতো পশুর হাটে যান। ছোটবেলায় অনেকেই অভিভাককের হাত ধরে হাটে গিয়েছেন হয়তো। কিন্তু ঘুরতে যাওয়া আর পশু কেনার দায়িত্বসহ যাওয়া কিন্তু এক কথা না। প্রথমবার পশু কিনতে যাওয়ার এই অভিজ্ঞতা নতুনদের জন্য রোমাঞ্চকর হলেও ছোট্ট কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা সর্তকতার অভাবে নানান বিপদে পড়ার শঙ্কা থাকে। তাই প্রথমবার কোরবানির পশুর হাটে যাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি-

১. বাজেট নির্ধারণ করুন
কোরবানির হাটে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করে নিন। যার ফলে আপনি বাড়তি খরচে না গিয়ে উপযুক্ত পশু কিনতে পারবেন। পকেটমার ও ছিনতাইকারীর কারণে টাকা অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। টাকা সরাসরি পকেটে না রেখে আলাদা ব্যাগে নিবেন।

২. অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিন
প্রতি বছরই কোরবানির পশুর হাটে অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা দালালের খপ্পরে পড়েন। তারা উভয়ের কাছ থেকে কৌশলে টাকা নিয়ে নেন। তাই আপনাকে আগে থেকেই দালাল চক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য প্রথমবার হাটে সময় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নেন। এতে তিনি দর কষাকষিতেও সহায়তা করবে এবং প্রতারণার হাত থেকেও রক্ষা পাবেন।

৩. স্বাস্থ্য সুরক্ষা
হাটের পরিবেশ অনেক নোংরা থাকে। চারপাশে পশুর মল-মূত্র ছড়িয়ে থাকে। হাটে ধুলাবালি, দুর্গন্ধ ও নানা জীবাণু থাকে। তাই হাটে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। তবে কথাবার্তা বলার সময় অনেকেই নাকের ওপর থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলে। কেউ আবার নাক-মুখ খোলা রেখে থুতনির ওপর মাস্ক পরেন। সঠিকভাবে মাস্ক না পড়লে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া হাটে প্রচণ্ড গরম থাকার কারণে পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করুন। দীর্ঘ সময় গরমের মাঝে অবস্থান করলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই বাসা থেকে বোতলে করে প্রয়োজনীয় নিরাপদ পানি, শরবত ও স্যালাইন সঙ্গে নেন।

৪. পায়ের যত্ন নিন
গোবর, চোনা, কাদা একাকার হয়ে পুরো হাট নোংরা হয়ে থাকে। তাই সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই চলাচল করতে হবে। যাদের পায়ের ক্ষত রয়েছে কিংবা যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা হাটে না যাওয়াই ভালো। হাটে গিয়ে পা থেঁতলে বা কেটে পিয়ে কাদা, গোবর ইত্যাদি লাগলে অবশ্যই সাবান দিয়ে পা ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগাতে হবে।

৫. ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে না নেওয়া
পশুর হাটে সাধারণত অনেক ভিড় থাকে। এতে ছোট বাচ্চারা সহজেই হারিয়ে যেতে পারে বা ধাক্কাধাক্কিতে আহত হতে পারে। হুট করে এত পশুর ডাক বা আচরণেও তারা ভয় পেতে পারে। এ ছাড়া পশুর অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের সময় বাচ্চারা আহত হতে পারে, এতে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। হাটে ধুলাবালি ও মল-মূত্রের গন্ধে শিশু অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনাও থাকে। তাই তাদের সঙ্গে না নেওয়াই উত্তম। এরপরও নিলে সঙ্গে একজন আলাদা ব্যক্তিকে নেন। যিনি শিশুকে নিরাপদে রাখবেন। এ ছাড়া বৃদ্ধ কিংবা পরিবারের অসুস্থ কোনো সদস্যকে নিয়ে যাবেন না।

৬. কোরবানির পশু নির্বাচন
হাটে গিয়ে সঠিক ও স্বাস্থ্যবান পশু নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ পশু কোরবানির অন্যতম শর্ত। তাই পশু কেনার সময় যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। পশুর শরীরের গঠন, অঙ্গ এবং শক্তি কেমন তা দেখে নিতে হবে। পশুটি কেমন হাঁটে বা দৌড়ায় খেয়াল করুন, খুব দুর্বল বা নিস্তেজ পশু কিনবেন না। এ ছাড়া মেডিসিনের মাধ্যমে মোটা ও বড় করা হয়েছে কিনা চেক করে নিন। এ জন্য হাটে থাকা পশুর ডাক্তারদের সহায়তা নেন।

৭. পশুর দরদাম
পশুর হাটে যাওয়ার আগে আশপাশের হাটে পশুর গড় দাম কেমন, তা জেনে নিন। পশুর শারিরীক গঠন ও স্বাস্থ্য কেমন, সেই হিসেবে দাম করতে হবে। পশু পছন্দ হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে হুট করে দাম করবেন না, আগে বিক্রেতার কাছ থেকে দাম শুনুন। দরদামের সময় ধৈর্য হারাবেন না। বিক্রেতার মুখের কথা বা ভিড়ের চাপে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। এ ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে থাকা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তা নিন। তবে বিক্রেতা যদি দাম নিয়ে বেশি গড়িমসি করে বা সন্দেহজনক আচরণ করে, তাহলে সেই জায়গা এড়িয়ে চলাই ভালো। এ ছাড়া একটা পশু দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে একাধিক পশু ঘুরে ঘুরে দেখে তুলনা করুন, এতে দরদাম সহজ হবে। দাম চূড়ান্ত হওয়ার আগে টাকা লেনদেন করবেন না। আর টাকা লেনদেনের সময় অবশ্যই হাট কতৃপক্ষের রসিদ সংগ্রহ করবেন।

৮. পশুর পরিবহন ব্যবস্থা
পশু কেনার পর তা নিরাপদে বাড়ি নেওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাটে গিয়ে অনেক সময় ভালো গাড়ি পাওয়া যায় না। তাই পশু কেনার আগেই পরিচিতজন, নির্ভরযোগ্য কোনো পরিবহন সংস্থা বা গাড়িচালকদের নম্বর রাখুন। পশুর আকার অনুযায়ী পিকআপ, ট্রাক বা ভ্যান নির্বাচন করুন। বড় গরুর জন্য খোলা ও প্রশস্ত ট্রাক ভালো, এতে পশু আঘাত পাবে না। এ ছাড়া পশুকে রাখার জন্য বাসা-বাড়িতে জায়গা প্রস্তুত রাখুন।

৯. পশুর জন্য খাবার
কোরবানির পশু কেনার পর তার যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক খাবার দেওয়া। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার পশুকে সুস্থ, সতেজ রাখতে সহায়তা করবে। তাই পশু কেনার সময় সঙ্গে খাবারও কিনে নিন। তবে এ বিষয়ে আগে মালিকের থেকে জেনে নিবেন আপনার কেনা পশুটি কোন ধরনের খাবার খায়। প্রয়োজনে পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে হাটে গেলে নিরাপদ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন। একইসঙ্গে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকেও রক্ষা পাবেন।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com