সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

প্রচ্ছদ বাংলাদেশ ৫ আগস্ট জনরোষ থেকে কীভাবে বাঁচলেন, জানালেন ওবায়দুল কাদের

প্রতিনিধি: / ১৪৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন তিনি প্রাণহানির ঝুঁকি এড়াতে স্ত্রীসহ পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়েছিলেন। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়াল-কে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি ওই দিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, নিজের আত্মগোপনের অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন তার বেঁচে থাকাটাই ছিল “পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার”। তিনি জানান, সংসদ এলাকার নিজ বাসা এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী একটি বাসায় আশ্রয় নিলেও সেখানেই হামলা চালায় উত্তপ্ত জনতা। স্ত্রীর সহায়তায় বাথরুমে লুকিয়ে থাকার সময় দুর্বৃত্তরা বাথরুমের জিনিসপত্র পর্যন্ত লুট করতে চেয়েছিল।

কাদেরের বর্ণনা অনুযায়ী, উত্তাল জনতা তার আশ্রয়স্থলে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। স্ত্রী বারবার তাদের বাধা দিলেও একপর্যায়ে তারা জোর করে বাথরুমে ঢোকার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত দরজা খুলে দিলে ৭-৮ জন যুবক ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমে আক্রমণাত্মক আচরণ করলেও পরে তারা কাদেরকে চিনতে পেরে আচরণ বদলে ফেলে। কিছুক্ষণ পর তারা তাকে মাস্ক ও ব্যাজ পরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

কাদের দাবি করেন, তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন প্রায় তিন মাস। এ সময় তিনি শ্রমিক অসন্তোষ ও গণআন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তবে একপর্যায়ে নিরাপত্তার জন্য তিনি দেশ ছাড়েন। তিনি এও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পেছনে “ষড়যন্ত্র” ছিল এবং এটি মূলত “লুটপাটের অভ্যুত্থান” হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তবে এই বিপর্যয়ের পরও নিজের ভূমিকায় অনুশোচনার তেমন ছাপ দেখা যায়নি তাঁর কথায়। তিনি বলেন, “আমি চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি। পারসেন্টেজ নেইনি। আমার দায়িত্ব পালন করেছি। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, তবে আমি সততার সঙ্গে কাজ করেছি।”

দীর্ঘ নীরবতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তিনি দাবি করেন, “আমাকে প্রধানমন্ত্রী (সাবেক) নিজেই খুঁজেছেন। আমার অসুস্থতার কারণে তিনি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন।”

একইসঙ্গে ছাত্রলীগকে মাঠে নামানোর বিষয়ে নিজের কোনো নির্দেশ ছিল না বলেও দাবি করেন কাদের। তার বক্তব্য, “ভিডিও ঘেঁটে কিছু ইউটিউবার এই মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে। আমি কখনোই অভ্যুত্থান দমন করতে ছাত্রলীগকে বলিনি।”

এছাড়া, সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু আমরা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি।”

প্রসঙ্গত, এক সময় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরও কলকাতায় দীর্ঘদিন অবস্থান করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেলহত্যার পরে কলকাতায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে নয় মাস ছিলেন।

এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি দলীয় নেতৃত্ব, আন্দোলনের উৎস, ব্যক্তিগত শঙ্কা ও দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা সবই তুলে ধরেছেন খোলামেলা ভঙ্গিতে। তবে তার এই স্বীকারোক্তি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—আসলে আওয়ামী লীগের পতন কি কেবল ষড়যন্ত্র, নাকি দীর্ঘ সময় ধরে জনরোষে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ?

(প্রতিবেদনটি দ্য ওয়াল-এর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।)


এই বিভাগের আরো খবর