আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গতকাল একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-আক্রমণের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। তবে চুক্তির ব্যাপ্তি সীমিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও পলিটিকো একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই হচ্ছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এটি একটি ‘চুক্তির কাঠামো’ মাত্র। গত ২ এপ্রিল ‘লিবারেশন ডে’ হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করার পর এটি হবে প্রথম কোনো বাণিজ্য চুক্তি। প্রেসিডেন্ট বিশ্বজুড়ে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও বহু দেশের ক্ষেত্রে উচ্চতর শুল্ক অস্থায়ীভাবে স্থগিত রেখেছেন, যাতে আলোচনার সুযোগ থাকে। গতকাল ট্রাম্প লেখেন, ‘একটি বড় ও সম্মানিত দেশের সঙ্গে একটি ‘মেজর ট্রেড ডিল’ ঘোষণা করা হবে। ’ তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়; এটি কেবল একটি কাঠামোগত ঘোষণা হতে পারে, যা পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ১০টায় হোয়াইট হাউসে ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেবেন বলে জানানো হয়েছে। তিনি একে ‘প্রথম, আরও অনেক চুক্তির শুরু’ বলে উল্লেখ করেছেন। লন্ডনে ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনার বিষয়ে আজই একটি ‘আপডেট’ দেবেন। সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী আজকের মধ্যেই এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দেবেন। ’ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ শুরুর আগে থেকেই স্টারমার এই চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। ট্রাম্পের মতো তিনিও গত বছর ক্ষমতায় আসেন। ব্রেঙ্টি-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি ব্রিটেনের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত লক্ষ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর এটি হবে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিজয়গুলোর একটি। আগামী ১৯ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি শীর্ষ সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি লন্ডনের জন্য কৌশলগত লাভ বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এমন চুক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ তারা নিজেরাও একটি গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য চুক্তি করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই সপ্তাহেই ভারত সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাজ্য, যা ব্রেঙ্টি-পরবর্তী তাদের সবচেয়ে বড় চুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে এই আলোচনা আবার শুরু হয়। তবে এখনও যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আর যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
চুক্তির বিস্তারিত
ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বলে আসছেন, বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের কিছু পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমানো হতে পারে, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টদের ওপর যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল সার্ভিস কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেও যুক্তরাজ্য কোনো পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, এমনকি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি শিল্পে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়াতেও নয়। কিংস কলেজ লন্ডনের অর্থনীতির অধ্যাপক জোনাথন পোর্টেস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি হবে মূলত ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা, না যে বড় কোনো অর্থনৈতিক সুবিধা। ফলে শুল্ক কিছুটা কমলেও, রপ্তানিকারকেরা গত বছরের তুলনায় এখনও বেশি শুল্কের মুখোমুখি হবেন। ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষক জিম রিড বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হতে সাধারণত এক বছর লাগে, তাই এটা সম্ভবত কেবল একটি কাঠামো হবে। তবে ১০ শতাংশ মূল শুল্কের জায়গা থেকে আলোচনা শুরু হলে তা অন্যান্য দেশের জন্যও মডেল হয়ে উঠবে। ’ ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড গতকাল সুদের হার এক চতুর্থাংশ কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতি ট্রাম্পের পক্ষপাত
স্টারমার ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ওয়াশিংটন সফরে যান, যেখানে শুল্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি তখন যে একটি চুক্তি হওয়া সম্ভব বলে আশাবাদী হন। সেই সময় ট্রাম্প স্টারমারকে ‘কঠিন আলোচক’ হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, একটি ‘দারুণ’ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। স্টারমার সফরের সময় ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো রাজকীয় সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে পারে। ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বরাবরই ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রশংস করেন। তার মা স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে তার একটি গলফ কোর্স রয়েছে।
https://www.kaabait.com