আজ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বৈশাখের প্রথম সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে নানা আয়োজনে, রঙে আর উচ্ছ্বাসে ভরপুর এই দিনটি পালিত হবে । নতুন বছরকে বরণ করে নিতে রাজধানীর রাস্তাঘাট, পার্ক, প্রাঙ্গণ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকবে উৎসবের বর্ণিল হাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ সকাল ৯টায় শুরু হবে। শোভাযাত্রা শুধু এক সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, বরং এক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষাও হয়ে উঠেছে।
শোভাযাত্রায় সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি এবং সাতটি ছোট মোটিফ বহন করা হবে, এতে থাকবে বাঙালির ঐতিহ্য, জীববৈচিত্র্য ও সমাজের নানা অসাম্যের প্রতীকী প্রতিবাদের চিত্র। ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, এমনকি বিদেশি অতিথিরাও অংশ নিবেন এই আয়োজনে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা হয়ে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে। এত বিশাল আয়োজনে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে নজিরবিহীন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুরো শোভাযাত্রা ও আশপাশের এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। মোট ২১টি সেক্টরে ভাগ করে শহরে মোতায়েন করা হয়েছে ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য, র্যাব, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা। প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি, সিসি ক্যামেরা, ড্রোন ও স্ট্যাটিক ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হবে। রয়েছে ডগ স্কোয়াডের সুইপিং, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড কেন্দ্র, ও বিশেষ সাইবার নজরদারিও। নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ব্যাগ, ধারালো বস্তু বা দাহ্য পদার্থ সঙ্গে না আনতে এবং শোভাযাত্রায় নির্ধারিত পথ ছাড়া প্রবেশ না করতে। রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানও আজ অনুষ্ঠিত হবে ভোরে। রবীন্দ্রসংগীত, লোকসঙ্গীত ও আবৃত্তিতে ভোরবেলায় গেয়ে উঠবে “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো”Ñ এই সুরেই জেগে উঠবে বাঙালির প্রাণ। নগরবাসী সপরিবারে ভিড় জমাবে প্রিয় এই আয়োজন উপভোগ করতে। নারী ও শিশুর জন্য আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থানের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবক দলও কাজ করবে সেখানে। বর্ষবরণ উপলক্ষে আতশবাজি, ফানুস ও উচ্চ শব্দের বাঁশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে আয়োজকদের। বিকেল ৫টার পর সকল স্থানে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত পরিচয় বহন করে। ধর্ম-বর্ণ, জাতি বা শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে মেতে ওঠে। এটি কেবল একটি দিন নয়, বরং বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। নানা প্রতিকূলতা, রাজনৈতিক জটিলতা, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জÑ সবকিছুকে ছাপিয়ে আজ রাজধানীসহ সারাদেশেই উচ্চারিত হচ্ছে একটাই সুর: নতুন বছর হোক আলোর, শান্তির ও সম্ভাবনার।