বিদেশ : দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসন সংক্রান্ত পার্লামেন্টের প্রস্তাব বহাল রেখে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। শুক্রবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত এ আদেশ দেন। খবর রয়টার্সের। গত বছর তাঁর সামরিক আইন জারির স্বল্পস্থায়ী সিদ্ধান্ত, যা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ততদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হন ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সাংবিধানিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুন হিউং-বায়ে বলেছেন, ইউন সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। মুন হিউং আরও বলেন, ‘ইউন জনগণের আস্থার সাথে গুরুতর বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, যারা একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম সদস্য। সামরিক আইন ঘোষণা করে তিনি সমাজ, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন।’ আদালতের ৮ বিচারপতির সর্বসম্মত রায়ে ইউনকে অভিশংসন করা হয়। ইউনের অপসারণের দাবিতে রাতভর অবস্থান নেওয়া হাজারো বিক্ষোভকারী আদালতের রায়ের পর উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং ‘আমরা জিতেছি!’ বলে স্লোগান দেন। এই রায়ের মাধ্যমে মাসের পর মাস চলতে থাকা রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত পরিণতি পেল, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক এবং দেশের অর্থনৈতিক মন্দার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। এদিকে, ৬৪ বছর বয়সী ইউন এখনও ‘বিদ্রোহ উসকে দেওয়া’ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি। তিনি জানুয়ারির ১৫ তারিখে গ্রেফতার হওয়ার পর মার্চ মাসে আদালত তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করে তাঁকে মুক্তি দেয়। এই সংকটের সূত্রপাত হয় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর, যখন ইউন ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ শক্তি নির্মূল এবং বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কথিত সংসদীয় কর্তৃত্বের অপব্যবহার ঠেকাতে সামরিক আইন জারি করেছিলেন। তবে, মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি সেই আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। সংসদ সদস্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরোধ উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন এবং সামরিক আইন প্রত্যাখ্যান করেন। ইউন পরে দাবি করেন, তিনি পুরোপুরি সামরিক শাসন জারি করতে চাননি এবং পরিস্থিতির গুরুত্বকে ছোট করে দেখিয়ে বলেন ‘কারও কোনো ক্ষতি হয়নি’। তবে, তাঁর এই ব্যাখ্যার পরও টানা কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলে।