সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬,৫৩১ জন প্রার্থী হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
কুমিল্লা থেকে আসা মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা এই সরকারের অধীনে সব ধাপ অতিক্রম করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমাদের আগে দুই ধাপের প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়েছেন এবং চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমাদের অনেকেই আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এই নিয়োগের জন্য, এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি।”
নারায়ণগঞ্জের ইশরাত আলম জানান, “আমাদের নিয়োগ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। এ আন্দোলন আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য।”
নওরীন চাঁদনী বলেন, “সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও যোগদান করতে না পারায় ৬,৫৩১টি পরিবার আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন নতুন চাকরিতে যোগদানের আশায়। তাদের বয়সসীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, ফলে অন্য কোনো চাকরিতে আবেদন করারও সুযোগ নেই।”
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, “কিছু লোকজন জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছেন, তবে তারা আজ সড়ক অবরোধ করেননি।” তবে এর আগের দিন সোমবার দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ, জলকামান এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। এরপরও আন্দোলনকারীরা সরে না গিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
আন্দোলনকারীদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ এবং ফলাফল প্রকাশিত হয় ২১ এপ্রিল। ১২ জুন সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৬,৫৩১ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। তবে সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া ৩১ জন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে আদালত ৬ মাসের জন্য নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে। অবশেষে ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া ৬,৫৩১ জনের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।”
https://www.kaabait.com