স্পোর্টস: ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর থেকে পরাজয় শব্দটি যেন ভুলে গেছে কলম্বিয়া। টানা ২৮ ম্যাচের অজেয় যাত্রায় তারা এখন কোপা আমেরিকার ফাইনালে। মাঠে হামেস রদ্রিগেস, লুইস দিয়াসদের সাফল্যযাত্রায় পর্দার আড়াল থেকে কৌশল সাজানোর কারিগর নেস্তর লরেন্সো। আর্জেন্টিনার শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে তিনিও কঠিন এক বাধা। প্রায় তিন যুগ আগে আর্জেন্টিনার জার্সিতে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা লরেন্সো এবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে ডাগআউটে দাঁড়াবেন নিজ দেশের বিপক্ষে। তার বিপরীতে দাঁড়ানো লিওনেল স্কালোনিও একসময় খেলেছেন লরেন্সোর কোচিংয়ে! বর্তমানে কলম্বিয়ার দায়িত্বে থাকা ৫৮ বছর বয়সী কোচের আর্জেন্টিনা ও হোসে পেকারম্যানের সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ সম্পর্ক। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার সহকারী কোচের দায়িত্বে থাকা পেকারম্যানই প্রথম সুযোগ দেন লরেন্সোকে৷ এর আগে অবশ্য আর্জেন্টিনো জুনিয়রসের হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু হয়ে যায় তার। জাতীয় দলে অভিষেকের পর ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে সমস্যাই হয়নি লরেন্সোর। ক্যামেরুন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে খেলেন তিনি। পরে ক্লাউদিও কানেজিয়ার চোটে সুযোগ পেয়ে যান জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচেও। পেনাল্টি থেকে করা রুডি ফলারের একমাত্র গোলে সেদিন টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার। আর জাতীয় দলের হয়ে সেটিই হয়ে থাকে লরেন্সোর শেষ ম্যাচ। এরপর ১৯৯৭ পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলে খেলে যান তিনি। ২০০০ সালে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের সহকারী কোচ হিসেবে কোচিং অধ্যায় শুরু করেন লরেন্সো৷তখন ওই দলের প্রধান কোচ ছিলেন লরেন্সোকে প্রথম জাতীয় দলে আনা পেকারম্যান। বয়সভিত্তিক দলে প্রায় দুই বছর একসঙ্গে কাজ করেন দুজন। এরপর ২০০৪ সালে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন পেকারম্যান। আর সহকারী হিসেবে তিনি আবার ডেকে নেন লেগানেসের দায়িত্ব পালন করতে থাকা লরেন্সোকে। ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে পেকারম্যানের সঙ্গে ডাগআউটে দাঁড়ান লরেন্সো। ওই আসরে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন স্কালোনি। সেটা ছিল বর্তমান অধিনায়ক লিওনেল মেসির প্রথম বিশ্বকাপ আসরও। কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর পেকারম্যানের মতো লরেন্সোও আর আর্জেন্টিনার কোচিং প্যানেলে থাকতে পারেননি। তবে গুরু-শিষ্যর পুনর্মিলন ঘটতে বেশি সময় লাগেনি। ২০১২ সালে কলম্বিয়ার প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন পেকারম্যান। আরও একবার তিনি সহকারী পদে ডেকে নেন লরেন্সোকে। এই দফায় একসঙ্গে ৬ বছর কাজ করেন তারা। ২০১৮ সালে সরে দাঁড়ান পেকারম্যান। পরের বছর পেরুর ক্লাব মেলগারের দায়িত্ব নেন লরেন্সো। ২০২২ বিশ্বকাপের টিকেট পেতে ব্যর্থ হওয়ায় কলম্বিয়ার কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হন রেইনালদো রুয়েদা। ওই বছরের জুনেই লরেন্সোকে প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয় কলম্বিয়া ফুটবল ফেডারেশন। এরপর থেকে সাফল্যের ডানায়ই ভাসছেন লরেন্সো। ব্রাজিল, জার্মানি, উরুগুয়ে, স্পেনের মতো বড় বড় দলগুলোকে হারিয়ে টানা ২৮ ম্যাচ ও দুই বছরের বেশি সময় ধরে অপরাজিত কলম্বিয়া। দলটির উড়ন্ত যাত্রায় এবার বড় পরীক্ষার নাম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও কোপা আমেরিকার বর্তমান শিরোপাধারী আর্জেন্টিনা। এই দলটির বিপক্ষেই সবশেষ কোনো ম্যাচ হেরেছিল কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনাও একরকম অজেয়। গত পাঁচ বছরে মাত্র দুটি ম্যাচ হেরেছে স্কালোনির দল। প্রায় দেড় যুগ আগে যাকে কোচিং করিয়েছেন লরেন্সো, এবার সেই স্কালোনির বিপক্ষেই হবে তার কৌশলের পরীক্ষা। দারুণ ছন্দে থাকা আর্জেন্টিনার সঙ্গে উড়ন্ত কলম্বিয়ার ফাইনাল ম্যাচটি তাই লরেন্সোর জন্যও অন্যরকম এক লড়াই। জিততে পারলেই যে অর্জিত হবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার সকাল ৬টায় শুরু হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ।