রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিক্ষোভ, হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি

প্রতিনিধি: / ৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে একদল উগ্র হিন্দুর বিক্ষোভ ও হুমকির ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর ভাষায়, দিল্লির কূটনৈতিক এলাকায় এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনার ব্যানারে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল চার থেকে পাঁচটি গাড়িতে করে সব নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে চানক্যপুরীর বাংলাদেশ হাউসের মূল ফটকের সামনে হাজির হয়। সেখানে তারা বাংলাদেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী ও কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন চিৎকার করে হাইকমিশনারের উদ্দেশে বলেন, “শালাকে গুলি করে মার।”

ঘটনার সময় বাংলাদেশ হাউসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উগ্রবাদী দলটি দীর্ঘ সময় ধরে স্লোগান দেওয়ার পর কোনো বাধা ছাড়াই এলাকা ত্যাগ করে। ওই সময় হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ হাউসেই অবস্থান করছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় তারা পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দিল্লির একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, চানক্যপুরীর মতো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কূটনৈতিক এলাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের বিক্ষোভ কীভাবে সম্ভব হলো, তা বড় প্রশ্ন। সাধারণভাবে এই এলাকায় প্রবেশ ও সমাবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে।

এ বিষয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি বাংলাদেশ ভবনের গেটের সামনে এসে চিৎকার করেন। তারা বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, “তারা ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে’ এবং ‘হাইকমিশনারকে ধরো’ জাতীয় স্লোগান দেয়। কোনো শারীরিক হামলা বা ভাঙচুর হয়নি, তবে হুমকিমূলক কথা বলা হয়েছে।”

ঘটনার পরপরই হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ জরুরি ভিত্তিতে হাইকমিশনের ডিফেন্স উইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ডিফেন্স উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিক্ষোভকারীরা কিছুক্ষণ চিৎকার করে চলে গেছে এবং অতিরিক্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দিল্লি ও আগরতলায় ভিসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করিয়ে দিয়েছে, দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়লে অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০০৪ সালে সম্পর্কের অবনতির সময় উগ্রবাদী হিন্দু গোষ্ঠী বাংলাদেশ হাইকমিশনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগোতে চাইলে পুলিশ দূরেই তাদের প্রতিহত করে। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরে আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ যখন তীব্র আকার ধারণ করেছে, সেই প্রেক্ষাপটেই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এই বিক্ষোভ ও হুমকির ঘটনা ঘটল। কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।


এই বিভাগের আরো খবর