বাঙালীর আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখের এই দিনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক কবিতা ও গান ছিল সীমাহীন প্রেরণা উৎস্য। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভ‚ষিত হন। কবির গান-কবিতা এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভ‚ত সাহস যোগায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধেই শুধু নয়, আমাদের প্রতিটি সংগ্রামে চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নোবেল বিজয়ী এই বাঙ্গালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্ত। শুধু দুই বাংলার বাঙালীই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষীরা কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও পরম শ্রদ্ধায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর, এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর, এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় কবির নিজস্ব জমিদারি কালিগ্রাম পরগণার কাচারী বাড়ি পতিসরে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মোৎসব। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নওগাঁ জেলা প্রশাসন এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বুধবার বিকেল ৩টায় রবীন্দ্র কাচারি বাড়ি পতিসর দেবেন্দ্র মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: শহীদুজ্জামান সরকার এমপি। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নওগাঁ-৬ (রানীনগর- আত্রাই) আসনের এমপি এ্যাডভোকেট মো: ওমর ফারুক, নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসনের এমপি সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নওগাঁ -৪ (মান্দা) আসনের এমপি এস, এম, ব্রহানী সুলতান মামুদ,নওগাঁ জেলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মো: আব্দুল মালেক। আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো: আশরাফুল ইসলাম, নওগাঁ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফুল ইসলাম খান, নওগাঁ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর এস এম মোজাফফর হোসেন এবং নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম। পরে নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমি আত্রাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং রানীনগর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী কলা ক‚শলীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে উদযাপিত হতে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩-তম জন্মজয়ন্তী উৎসব। তবে এবার কুষ্টিয়ার দু’টি উপজেলা নির্বাচন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে জন্ম বার্ষিকী একই দিনে হওয়ায় জন সমাগম একটু বিঘিœত হতে পারে। যদিও ভোটের দিকে সাধারণ জনগণের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তার পরেও ভোট বলে কথা। পড়ন্ত বৈশাখের বর্ণিল এই উৎসবকে সামনে রেখে কুঠিবাড়িতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। একদিকে বাঁশ, কাঠ ও ত্রিপল দিয়ে চলছে মঞ্চ তৈরি। অন্যদিকে রং তুলির শেষ আঁচড়ে কুঠিবাড়িকে ঝকঝকে তকতকে করতে ফুরসত নেই শিল্পীদের। জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বসবে দুইদিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা। রংবে রঙের বাহারি পণ্য দিয়ে দোকান সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে তাই দোকানিরা। আয়োজনের কোথাও রাখছেন না কোন ত্রæটি। জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনের প্রস্তুতির সকল কর্মকাÐ তদারকি করেছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ বছর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত থাকবেন কুষ্টিয়া -৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবেন দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা ৫৯ টি রবীন্দ্র সংগীতের দল। উল্লেখ্য, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এই অঞ্চলে জমিদারি পান। কবিগুরু ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহে জমিদারি পরিচালনা করেন। পদ্মা পাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি একে একে রচনা করেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালীসহ বিখ্যাত সব কাব্য গ্রন্থ। কুঠিবাড়ির এই কুঠিরে বসেই করেন গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদ। যে কাব্য দিয়েই ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন ভানুসিংহ ছদ্ম নামের রবীন্দ্রনাথ। অসংখ্য গান, কবিতা, চিঠি, চিত্রকর্ম ও সাহিত্য শিলাইদহকে করেছে রবীন্দ্রসাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য। এবছর কুঠি-বাড়ি চত্বরে স্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে কবিগুরুর গান, কবিতাও শিল্প-সাহিত্যের আলোচনায় মুগ্ধতা ছড়াবেন সাহিত্য সমালোচক ও দেশবিদেশের বরেণ্য রবীন্দ্র শিল্পীবৃন্দ। রবীন্দ্র সাহিত্য ও সুরের মূর্ছনায় সাহিত্য ও ব্যক্তি জীবনের অনুপ্রেরণা পাবেন এমন ধারণা ভক্ত অনুরাগীদের। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে এবারের রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। আয়োজনকে সফল করতে প্রত্যন্ত বিভাগও নিয়েছে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ। শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হিসেবে কর্মরত আছেন আল-আমিন হুসাইন। তিনি জানান, বিশ্ব কবির ১৬৩তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসন কুষ্টিয়ার উদ্যোগে কুঠিবাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহা. আকিবুল ইসলাম ইসলাম আকিব জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর তরফ থেকে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের একটা মিটিং হয়েছে। অনুষ্ঠান এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিথি ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ ভ‚মিকা রাখবো বলে আশা করছি। কবি গুরুর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন বিষয়ে কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহে বেসরকারিভাবে বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। বিরূপ আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলে আয়োজনে নেই কোন গড়িমসি। সকলের সহযোগিতায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করতে পারবো বলে মনে করি। ‘আজি হতে শতর্বষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/শত কৌতুহল ভরে/ …আজি হতে শতর্বষ পরে/এখন করিছো গান সে কোন নুতন কবি/তোমাদের ঘরে!’ এক’শ বছরেরও বেশি আগে বাঙ্গালী পাঠকদের প্রতি এই জিঞ্জাসা ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। নানা সংকট-আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমাদের চেতনায় বরাবর স্পর্শ করছে এবং করবে অন্তত আরো এক’শ বছর পরেও-বাঙ্গালি মাত্রই তা বোধ হয় বলতে পারবেন। কবির আশংকার জবাবে আরো বলা যায় শত বছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য এবং সংগীতের ভ‚বন। তারপরেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজন। এখনকার নবীনদের সৃষ্টির উৎসও তিনি। এখনো জীবনের সবকিছুতে হাত বাড়াতে হয় রবীন্দ্রনাথে। তাই, কবির বসন্ত গান শতবছর পরেও ধ্বনিত হয় নবীন কবি আর পাঠকের বসন্ত দিনে। জন্মের দেড় শতাধিক বছর পেরিয়ে এবং মৃত্যুর অনেক বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক-এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, বাঙালীর এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালীর মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভ‚মিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালী মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। দেড়শত বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।