আনন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে হঠাৎ ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়েছে খালিস্তানি কর্মীরা। মূলত বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ হিন্দুদের আয়োজিত একটি বিক্ষোভের জেরে খালিস্তানিরা সেখানে পাল্টা বিক্ষোভ করে এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অবস্থানে নিয়ে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়। এতে সেখানে উত্তেজনা বাড়ে এবং হিন্দুদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ব্যাহত হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে আয়োজিত শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশ খালিস্তানি গোষ্ঠীর বাধায় ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু ও ব্রিটিশ হিন্দুদের এই আয়োয়িত এই বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের দাবি জানানো হয়। তবে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের এই কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক খালিস্তানি এসে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয় এবং খালিস্তানের পতাকা প্রদর্শন করে। ইউকে ইনসাইট গ্রুপের মানু খাজুরিয়া বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সম্প্রীতির পক্ষে যারা কথা বলছিলেন, তাদের কণ্ঠরোধ করতে খালিস্তানিদের এই চেষ্টাটা খুবই হতবাক করার মতো বিষয়’। এর আগে ভারত শুক্রবার জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘অবিরাম শত্রুতা’ গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সাওয়াল সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু- হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়’। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং আশা করি অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হবে।’ তবে মুসলিম ও খ্রিস্টানসহ ভারতেও সংখ্যালঘু নিপীড়ন চলছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে। এমনকি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনকে ঘিরেও সম্প্রতি দেশটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটির ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও কেরালাসহ একাধিক রাজ্যে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিনের অনুষ্ঠান ও সাজসজ্জাকে ঘিরে হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কট্টর ও উগ্রপন্থি গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সংশ্লিষ্ট ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রকাশ্যে হিন্দুদের বড়দিন উদযাপন থেকে বিরত থাকতে বলেছিল। সংগঠনটি বড়দিনে অংশগ্রহণকে নিজেদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবেও বর্ণনা করে। এমনকি ভারতের বিভিন্ন শহরে বড়দিনের সামগ্রী বিক্রি করা হকারদের ভয় দেখানো ও হয়রানির ঘটনাও ঘটে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও ও পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, দিল্লির লাজপত নগরে বজরং দলের সদস্যরা সান্তা ক্লজের টুপি পরা নারী ও শিশুদের মৌখিকভাবে হেনস্তা করে। ভারতের ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স (সিবিসিআই) বড়দিনের মৌসুমে খ্রিস্টানদের ওপর একের পর এক এসব হামলা নিয়ে সম্প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে তারা। এছাড়া ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবারকে রাতারাতি গৃহহীন করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার ফলে শত শত মুসলিম পরিবার মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে দেশটির বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে মারা হচ্ছে।