বিনোদন: ঢাকায় একের পর এক কনসার্ট বাতিলের ধারাবাহিকতায় এবার স্থগিত হলো পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আতিফ আসলামের বহুল প্রতীক্ষিত কনসার্ট। গত শনিবার রাজধানীতে তাঁর পারফর্ম করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কনসার্ট স্থগিতের খবরটি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন আতিফ আসলাম। বাংলাদেশি ভক্তদের উদ্দেশে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “প্রিয় বাংলাদেশি ভক্তরা, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় আমাদের কনসার্টটি আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আয়োজক দল প্রয়োজনীয় স্থানীয় অনুমতি, নিরাপত্তাজনিত ছাড়পত্র এবং লজিস্টিকসহ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারেনি।” তাঁর এই বার্তায় ভক্তদের হতাশা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই কনসার্ট আয়োজনের দায়িত্বে ছিল দুটি প্রতিষ্ঠান, ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ এবং ‘মেইন স্টেজ’। তবে অনুষ্ঠান বাতিলের নির্দিষ্ট কারণ নিয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি আয়োজকরা। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, আয়োজকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সরকারি ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রক্রিয়াধীন থাকায় শেষ মুহূর্তে এসে কনসার্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ভেন্যু হিসেবে নির্ধারিত ছিল পূর্বাচল নতুন শহরের চাইনিজ ফ্রেন্ডশিপ এঙ্িিবশন সেন্টার। এর আগে ২৫ নভেম্বর কনসার্টের ঘোষণা দিয়ে আয়োজক পক্ষ জানিয়েছিল, অনুষ্ঠানটি নিয়মতান্ত্রিক ও নিরাপদভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সঙ্গে তারা কাজ করছে। এমনকি আয়োজকেরা এটিকে চ্যারিটি কনসার্ট হিসেবেও তুলে ধরেছিলেন, যেখানে আয়ের একটি অংশ দান করার কথা বলা হয়েছিল। তবু শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এদিকে ‘চলঘুরি’ নামের একটি টিকিটিং প্ল্যাটফর্মে আড়াই হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা দামের টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। কনসার্ট স্থগিতের খবরে টিকিটধারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, অনুমতি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই কেন টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছিল। এখন বেশির ভাগ দর্শকই টিকিটের অর্থ ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল, শেষ মুহূর্তে কনসার্ট বাতিল হলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আয়োজকের সুনাম নষ্ট হয়। একই সঙ্গে বিদেশি শিল্পীদের এভাবে ফিরে যেতে হলে দেশের বিনোদন আয়োজনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলেও বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা অনুবিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আপাতত পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েকটি কনসার্টের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলেই একের পর এক বড় আয়োজন স্থগিত হচ্ছে। শীত মৌসুমকে সাধারণত কনসার্টের ভরা সময় ধরা হলেও চলতি পরিস্থিতিতে আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। আতিফ আসলামের কনসার্ট স্থগিত হওয়ার ঘটনায় সেই অনিশ্চয়তা আরও স্পষ্ট হলো, আর দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে জমে উঠল ক্ষোভ ও প্রশ্ন।