বিনোদন:বিশ্ব বিনোদন জগতে আলোড়ন তুলেছে এক অভূতপূর্ব অধিগ্রহণ। ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ফিল্ম ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনতে চলেছে নেটফ্লিঙ্। গত শুক্রবার দুই পক্ষ চুক্তির ঘোষণা দিলে হলিউডে নতুন শক্তির জন্মের ইঙ্গিত মিলেছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে হ্যারি পটার, গেম অব থ্রোনস, ডিসি কমিকস এবং এইচবিও ম্যাঙ্রে মতো জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডের মালিকানা এক ছাতার নিচে চলে আসবে। এই অধিগ্রহণকে ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল প্যারামাউন্ট, স্কাইড্যান্স এবং কমকাস্টের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত প্রতি শেয়ারের মূল্য প্রায় ২৭ দশমিক ৭৫ ডলার প্রস্তাব দিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায় নেটফ্লিঙ্। এতে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মোট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৮২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় মিডিয়া অধিগ্রহণ, যা হলিউডের মানচিত্র বদলে দিতে পারে। ঐতিহ্যবাহী ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মালিকানায় রয়েছে এইচবিও ম্যাঙ্, ডিসি স্টুডিও এবং অসংখ্য ইতিহাসখ্যাত চলচ্চিত্র ও সিরিজ। অন্যদিকে নেটফ্লিঙ্ ইতিমধ্যেই স্ট্রেঞ্জার থিংস এবং স্কুইড গেমের মতো আলোড়ন সৃষ্টিকারী কনটেন্টের মাধ্যমে বিশ্ব স্ট্রিমিং বাজারে শীর্ষে। দুই প্রতিষ্ঠান একীভূত হলে কনটেন্ট লাইব্রেরি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে নেটফ্লিঙ্ নতুন উচ্চতায় যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। নেটফ্লিঙ্রে সহ প্রধান নির্বাহী টেড সারানদোস চুক্তি নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “দর্শকরা তাদের পছন্দের কনটেন্ট আরও বেশি পাবেন। আমরা গল্প বলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একসঙ্গে কাজ করতে পারব। ” ওয়ার্নার ব্রাদার্সের প্রধান নির্বাহী ডেভিড জাসলাভও একই সুরে বলেন, “বিশ্বের দুই সেরা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করবে, এটাই এই চুক্তির সবচেয়ে বড় অর্জন। ”তবে এত বড় চুক্তি নিয়ে আপত্তিরও শেষ নেই। রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকাসহ কয়েকটি সংগঠন সতর্ক করে বলেছে, অধিগ্রহণের ফলে কর্মী ছাঁটাই বাড়তে পারে, কনটেন্ট উৎপাদন কমতে পারে এবং দর্শকদের খরচও বাড়তে পারে। তারা মনে করছে, বাজারে একচেটিয়া ক্ষমতা তৈরি হলে শিল্পের ভারসাম্য নষ্ট হবে। একই উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া বাজারবিরোধী সংস্থাগুলোও। নেটফ্লিঙ্ দাবি করছে, তারা গ্রাহকদের জন্য কম খরচে বান্ডেল অফার দিতে পারবে এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সিনেমাগুলো আগের মতোই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি বছরে প্রায় দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার খরচ সাশ্রয়ের আশা করছে তারা। চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তের ওপর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের গ্রীষ্মে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি দুটি আলাদা অংশে ভাগ হবে এবং সেই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নেটফ্লিঙ্রে অধীনে যাবে ফিল্ম ও স্ট্রিমিং বিভাগটি। তখনই স্পষ্ট হবে এই বিশাল পরিবর্তন শিল্পকে কোথায় নিয়ে যায়।