গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন দিন ঠিক করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রোববার ২৩ নভেম্বর দুপুরে ট্রাইব্যুনাল জানায়, টিএফআই সেলের মামলার শুনানি হবে ৩ ডিসেম্বর এবং জেআইসি সেলের মামলার শুনানি হবে ৭ ডিসেম্বর।
ঘটনার প্রেক্ষাপটে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে বিরোধী মতের অসংখ্য ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে পৃথক এই দুই মামলা করা হয়। গত ৮ অক্টোবর মামলাগুলোতে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
রোববার সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। সকাল ১০টার দিকে বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেপ্তার ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনা হয়। এরপর শুরু হয় শুনানি। আসামিদের সশরীরে হাজিরার পরিবর্তে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবী মাইদুল ইসলাম পলক। এই আবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
এদিকে পলাতক আসামিদের হাজিরার জন্য বাংলা ও ইংরেজি দুই জাতীয় পত্রিকায় আগেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব আসামির মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ আরও অনেকে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই মামলায় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তার ভাষায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন দায়িত্ব পালন করছে, ঠিক তেমনি সেনাবাহিনীও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে।
আগামী ৩ ও ৭ ডিসেম্বরের শুনানিতে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্তের দিকেই এখন নজর গোটা দেশের।