পুরান ঢাকার ভবনগুলোর নকশাহীন নির্মাণ ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে কড়াকড়ির ঘোষণা দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। বংশালের কসাইটুলীতে ভূমিকম্পে রেলিং ভেঙে পড়ার ঘটনার পর শনিবার ২২ নভেম্বর এলাকায় ঘুরে ভবনের অবস্থা পরিদর্শন করেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। তিনি জানান, ঢাকার সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শিগগিরই চিহ্নিত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, কসাইটুলীর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির নকশা মালিকপক্ষ দেখাতে পারেনি। আগামী সাত দিনের মধ্যে নকশা জমা দিতে ব্যর্থ হলে ভবনটি সিলগালা করা হবে। তিনি বলেন, এক কাঠার কম জমিতে রাজউক কোনো প্ল্যান অনুমোদন করে না, কিন্তু পুরান ঢাকার বহু ভবনই নকশাহীনভাবে ৬ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে। এসব ভবনের মালিকদের বিরুদ্ধে মিটার বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যদিও অনেকেই চোরাই মিটার বা জেনারেটর ব্যবহার করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকার শত বছরের পুরনো ভবনগুলোর ঐতিহ্য সংরক্ষণ করেই নতুন পরিকল্পিত নগরায়ণের কাজ এগিয়ে নিতে চায় রাজউক। এ জন্য অনেকগুলো ছোট প্লট একত্রিত করে নিরাপদ ও আধুনিক ভবন নির্মাণের পরামর্শ দেন তিনি। তার ভাষায়, এতে মালিকদের সাময়িক ক্ষতি হলেও নতুন ভবনের উচ্চতা ও সুযোগসুবিধা তাদের আর্থিকভাবে লাভবান করবে। এ সময় বিভিন্ন ভবনের সামনে অবৈধ তাঁবু ও ছাউনি উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন তিনি।
এর আগের দিন শুক্রবার ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীসহ সারাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭, উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী এবং গভীরতা ১০ কিলোমিটার। ভূমিকম্পে কসাইটুলীতে রেলিং ধসে তিন জনসহ সারাদেশে মোট ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ৫০০ জনের বেশি আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুতর আহত ১৬ জনকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাজউক চেয়ারম্যান মনে করেন, পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ও নকশাহীন ভবনের সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। তাই ভূমিকম্পের পর যে ক্ষয়ক্ষতি ধরা পড়েছে, সেটি পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ এনে দিয়েছে। তার মতে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।