রাজনৈতিক উত্তাপের ভেতর দেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আছে বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে সহিংসতা নয়, পরস্পরের মতকে গ্রহণ করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। বুধবার ১৯ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়েছিল চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সংকলিত গ্রন্থ ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ প্রকাশ উপলক্ষে। শুরুতে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি এবং শরিক দলগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের মূল শিক্ষা হলো ভিন্নমতকে সহ্য করা। তার ভাষায়, আমি কথা বলব, আপনি কথা বলবেন, মতের অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু কাউকে পিটিয়ে তার মত বন্ধ করে দেয়া, উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা ছড়ানো, কিছু লোক জড়ো করে বলানো ভেঙে দাও বা গুঁড়িয়ে দাও, এগুলো কোনোভাবেই গণতন্ত্রের আচরণ নয়। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই প্রবণতা থেকে সরে আসা এখন জরুরি।
তিনি বলেন, দেশ আজ এক ধরনের ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছে। নির্বাচন সামনে এলেও এটিকে চূড়ান্ত লক্ষ্য ধরে নিলে ভুল হবে, বরং গণতন্ত্রকে টেকসই ভিত্তিতে দাঁড় করানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, টেকসই রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে দলকে বড় ভূমিকা নিতে হবে। তার মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপির ওপর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অতীতে যারা লড়াই করেছে, ভবিষ্যতেও যারা লড়াই করবে, সেসব শক্তিকে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক মোর্চা গড়ে তুলতে হবে। এই মোর্চাই দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে।
বুধবারের অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, একদিকে রায় ঘোষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে উচ্ছৃঙ্খলতার চিত্র দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। তার অভিযোগ, একটি বিশেষ মহল রায়ের গুরুত্বকে আড়াল করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভিন্ন খাতে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি কোনো বিপ্লবী দল নয়। বিএনপি নিজেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে দেখে। বিভিন্ন মত, ধর্ম ও জনগোষ্ঠীকে একত্রে নিয়ে একটি রেইনবো স্টেট গড়ে তোলার লক্ষ্যই দলের ঘোষিত নীতি। তার ভাষায়, উই আর লিবারেল ডেমোক্রেটস। এতে কারও ভুল বোঝার সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ শরিক দলের অন্যান্য নেতারা। তারা জানান, জনগণ আর ফ্যাসিবাদের দিকে ফিরতে চায় না এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির ঐক্য বজায় রাখাই এখন জরুরি।