শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

আজ সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস ,বাগেরহাটে ১৮ বছর পরও আতঙ্ক কাটেনি

প্রতিনিধি: / ১৫ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

সৈয়দ শওকত হোসেন,,বাগেরহাটঃ আজ ১৫ নভেম্বর ভয়াল সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৮ বছর। ২০০৭ সালের এই দিনে দানবরূপী ঘূর্ণিঝড় সিডর লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল বাগেরহাটসহ দেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল। সেই রাতের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের শরণখোলা পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। প্রাণ হারিয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। এখনো ভুলতে পারেনি সেই রাতের বিভীষিকা—এক মুহূর্তে ভেসে গিয়েছিল ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গাছপালা ও ক্ষেতের ফসল। চারদিকে ছিল শুধু লাশ আর স্বজনহারা মানুষের আহাজারি।
টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরের আঘাতে নাজুক বাঁধ ভেঙে বলেশ্বর নদের জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শরণখোলার সাউথখালীসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।
সিডরের প্রায় ৯ বছর পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে বলেশ্বর নদের তীরে শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী থেকে মোরেলগঞ্জ সীমান্ত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রায় ২০ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মিত হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘সিইআইপি-১’প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ শুরু করে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সিএইচডব্লিউই’।
তিন বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতা ও অজুহাতে সময় লাগে প্রায় সাত বছর। শেষমেষ ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঁধটি পাউবোর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাঁধটির বিভিন্ন অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। পুরো ২০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১১টি স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে এবং মূল বাঁধেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীশাসন ছাড়াই বাঁধ নির্মাণ, নকশাগত ত্রুটি ও নির্মাণকাজে দুর্বলতা এর প্রধান কারণ।
বাঁধের বর্তমান অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। তাদের মনে আবারও ফিরে এসেছে সিডরের সেই বিভীষিকাময় রাত।
নদীতীরবর্তী গাবতলা গ্রামের মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালীর আলমগীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর খান, উত্তর সাউথখালীর আনোয়ার হাওলাদার বলেন,সিডরে আমরা স্বজন হারিয়েছি, ঘরবাড়ি সব ভেসে গেছে। এত বছর পরও আবারও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে—এটা ভেবে আতঙ্কে আছি। নদীশাসন ছাড়া বাঁধ নির্মাণ করায় বছর না যেতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুই–তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে যাবে।
এলাকার আরও কয়েকজন বাসিন্দাও একই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
উত্তর সাউথখালীর রওশন আরা বেগম বলেন,
সিডরের রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে পানির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছিলাম। এখন আবার বাঁধ ভাঙছে রাতে ঘুমাতে গেলেই ভয় হয়।
বগীর জেলে মতিয়ার রহমান বলেন,আমরা ভেবেছিলাম সিডরের মতো ভয় আর আসবে না। কিন্তু অবস্থাদেখে মনে হচ্ছে সব আবার ফিরে আসছে।
 কৃষক ওমর ফারুক বলেন,৫ বিঘা জমিতে ধান করি। সিডরের সময় সব নষ্ট হয়েছিল। বাঁধ আবার ভাঙলে এবারও সব শেষ হয়ে যাবে।
 গ্রামের বৃদ্ধ কুদ্দুস শেখ বলেন, বয়স হয়েছে, কিন্তু সিডরের ভয় এখনো ভুলিনি। এই ভাঙন দেখে মনে হচ্ছে বিপদ আবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
শরণখোলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন পঞ্চান্নে অভিযোগ করে বলেন,
নদীশাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ হয় না। নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। মাটির বদলে নদীর বালু ব্যবহার করায় বাঁধের উচ্চতা পাওয়া গেছে, কিন্তু স্থায়িত্ব হয়নি। দ্রুত নদীশাসন না করলে এই বাঁধ টিকবে না।তিনি দুর্নীতি তদন্ত ও জরুরি নদীশাসন কার্যক্রমের দাবি জানান।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় এক হাজার মিটার এলাকায় ভাঙনরোধে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। শরণখোলার বগী এলাকায় প্রায় ৭০০ মিটারে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক এবং ফাসিয়াতলা এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এগুলো শেষ হলে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।


এই বিভাগের আরো খবর