আনন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিল থেকে উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরেই একটি ইউপিএস কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১২ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় পুরো বিমানটি। বিমানবন্দরের কাছে থাকা একটি শিল্প এলাকাজুড়েও ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসাবশেষ। ১২ জন নিহতের সংখ্যা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করলেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্টাকির গভর্নর। জানা গেছে, এমডি-১১ নামের মালবাহী বিমানটি হাওয়াইয়ের হনোলুলু যাওয়ার পথে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে তিনজন ক্রু সদস্য ছিলেন।
লুইসভিলে কী ঘটেছিল?
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে লুইসভিলের মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই ইউপিএস ফ্লাইট ২৯৭৬ বিধ্বস্ত হয়। বিমানবন্দরের সীমানা থেকে ২ কিলোমিটার (১.২ মাইল) কম দূরে এবং একটি শিল্প এলাকায় বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এটি মাত্র ৫০ মিটার (১৬৪ ফুট) উচ্চতায় উঠেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং ধাক্কা খায় রানওয়ের কাছাকাছি কয়েকটি স্থাপনার সঙ্গে। বিধ্বস্ত হওয়ার সময় এটিতে এক লাখ ৪৪ হাজার জ্বালানি ছিল। বিমান চলাচল বিষয়ক আইনজীবী পাবলো রোজাস অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব কম ব্যবস্থা ছিল এবং জ্বালানির পরিমাণের কারণে বিমানটি নিজেই প্রায় বোমার মতো কাজ করেছে।’ ইউপিএস এবং ফেডেঙ্ এখনও বেশ কয়েকটি এমডি-১১ কার্গো জেট ব্যবহার করে, যা সর্বশেষ ২০০০ সালে নির্মিত হয়েছিল। কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে নতুন এবং আরও দক্ষ বিমানে স্থানান্তরিত হওয়ার সাথে সাথে পুরোনো এসব বিমান অবসরে যাচ্ছে।
ইউপিএস ফ্লাইটটি কোথায় বিধ্বস্ত হয়?
লুইসভিল মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইন্ডিয়ানা রাজ্য সীমান্তের কাছে লুইসভিল শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার (৭ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। বিমানবন্দরটির চারপাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা এবং এটি বেশ কয়েকটি স্থানীয় ল্যান্ডমার্ক থেকে মাত্র অল্প দূরে অবস্থিত। বিমানটি বিমানবন্দরের কাছে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- কেন্টাকি পেট্রোলিয়াম রিসাইক্লিং এবং গ্রেড এ অটো পার্টস অটো স্যালভেজ ইয়ার্ডে আঘাত হানে। তবে এ ঘটনায় নিকটবর্তী ফোর্ড মোটর অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। এই প্ল্যান্টে হাজার হাজার শ্রমিক এসইউভি তৈরি করেন। তবে, সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয় অঞ্চলটিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। দুর্ঘটনার ফলে বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে গত বুধবার পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে।
বিমানটি কীভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়?
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি প্রায় ৫৩ মিটার (১৭৫ ফুট) উপরে উঠেছিল এবং হঠাৎ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এটির গতি পৌঁছেছিল ১৮৪ নট। টেকঅফ রোলের সময় বা তার কিছুক্ষণ পরে নজরদারি ফুটেজ এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ডানা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাম ইঞ্জিনটি এবং আগুন লেগে যায় বাম উইং পার্টে। সম্ভবত ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এটি আরও তীব্র স্বয়ংক্রিয় হয়। বিমানটি উড়ে গিয়ে রানওয়ের বেড়ার শেষ অংশ ছাড়িয়ে শিল্প অঞ্চলের ভবনগুলোতে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে প্রায় .৮ কিলোমিটার আগুনের গোলা এবং ধ্বংসাবশেষের ক্ষেত্র তৈরি হয়। গত বুধবার জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড (এনটিএসবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে মাটিতে ইঞ্জিনটি পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে এনটিএসবি সদস্য টড ইনম্যান বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দরের সিসিটিভি নিরাপত্তা কভারেজ দেখেছি, যেখানে টেকঅফ রোলের সময় বাম ইঞ্জিনটি ডানা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, দুর্ঘটনার ফলে কেনটাকি পেট্রোলিয়াম রিসাইক্লিংয়ে ছোট ছোট বিস্ফোরণ ঘটে। ফ্লাইটরাডার২৪ জানায়, ২০০৬ সালে ইউপিএস দিয়ে কাজ শুরু করা বিমানটি মঙ্গলবার লুইসভিল থেকে বাল্টিমোরে উড়ে এসে লুইসভিলে ফিরে আসে। প্রাক্তন ফেডারেল দুর্ঘটনা তদন্তকারী জেফ গুজেটি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ ইঞ্জিন। তবে এর কাঠামোতে, নাকি বিমানের অন্য কোনো অংশ থেকে সমস্যার সূত্রপাত সেটি নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।’ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইঞ্জিনটি আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং জ্বালানি লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার কারণেও দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। অথবা জ্বালানি লিক হয়ে ইঞ্জিনটি পুড়ে যাওয়ার কারণেও হতে পারে। খুব শিগগিরই এটি জানা যাবে।’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা বিমানের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা ব্ল্যাক বঙ্ খুঁজে পেয়েছেন। বিশ্লেষণের জন্য ডিভাইসগুলো ওয়াশিংটন নিয়ে যাওয়া হবে।