ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে আগুনের ফলে দেশের ওষুধ খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার তেজগাঁওয়ে সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান, আগুনে পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল দেশের শীর্ষ ৪৫টি ওষুধ কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার, এবং মোট ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেন। তিনি বলেন, “পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ছিল। এসব কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজ, যা পুনরায় আমদানি করতে সময় লাগবে।”
জাকির হোসেন আরও বলেন, “প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, কারণ একেকটি কাঁচামাল একাধিক ফিনিশড প্রোডাক্ট উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এই হিসাব অনুযায়ী, কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে।”
সমিতি নেতারা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৫০টি সক্রিয়ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। আগুনের প্রভাব এড়াতে তারা সরকারের কাছে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচামালের শুল্ক, ভ্যাট ও ব্যাংক চার্জ মওকুফ, দ্রুত আমদানি ও ছাড়ের ব্যবস্থা, কোল্ডচেইন পণ্যের দ্রুত রিলিজ এবং সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা নিয়ে যৌক্তিক সভা আয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির কোষাধ্যক্ষ হালিমুজ্জামান, রেনাটার সিইও ও এমডি কায়সার কবির, এবং সিনিয়র প্রেসিডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেন।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্র অনুযায়ী, গত শনিবার দুপুরে কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। রাত ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয় ২৭ ঘণ্টা পর রোববার বিকেলে। আগুনে কার্গোতে থাকা কাঁচামালের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শিল্পের ওপরও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) ইতিমধ্যেই ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে।