মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

বিপুলসংখ্যক মামলার তদন্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য থমকে আছে

প্রতিনিধি: / ২৬ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য দেশের থানাগুলোতে থমকে আছে বিপুলসংখ্যক মামলার তদন্ত কার্যক্রম। মাসের পর মাস এমনকি বছর পেরিয়ে গেলেও মিলছে না অপরাধ প্রমাণের অপরিহার্য ওই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। আর ওই দীর্ঘসূত্রিতায় তদন্তে বিঘ্ন এবং মামলাজট সৃষ্টি হচ্ছে। হত্যাকাণ্ড কিংবা অপমৃত্যু মামলার তদন্তে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামত। কোনো মামলার ন্যায়বিচারও ওই প্রতিবেদনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে দেরি হলেও অন্যান্য আলামতের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে নেয়া গেলেও অভিযোগপত্র দিতে দেরি হয়। কিন্তু অপমৃত্যুর ঘটনার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পেলে তদন্তই আটকে থাকে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীতে ছিনতাই, পারিবারিক কলহ, চাঁদাবাজি, পূর্ব শত্রুতাসহ নিয়মিত হত্যাকাণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সহজে মিলছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আট বিভাগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় স্থগিত রয়েছে ১ হাজার ১৯৫টি মামলার তদন্ত। এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ওই মামলাগুলোর মধ্যে ৬০টির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। আর ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ৩১১টি অপমৃত্যুর মামলার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ২৯১টি মামলার প্রতিবেদন। পুলিশের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন সময় তদবির করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকারী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর ৫০ থানায় ৭৩৮টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ৪৫৬টি হত্যা মামলা। ওসব হত্যা মামলার ১৩১টি তদন্ত করছে পুলিশের তিনটি সংস্থা পিবিআই, সিআইডি ও এটিইউ। ষৈগুলোর মধ্যে মাত্র একটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকি ৩২৪টি মামলা ডিএমপি তদন্ত করছে। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৭ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যায়। ওই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় মামলার তদন্ত থমকে রয়েছে। তাছাড়া অনেক হত্যাকান্ড তদন্তে নেপথ্যের সব কিছু উঠে এলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অভাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দিতে পারছে না।

সূত্র আরো জানায়, ময়নাতদন্তে অপমৃত্যু যদি হত্যাকান্ড প্রমাণিত হয় তাহলে ঘুরে যায় মামলার তদন্তের মোড়। তখন পুলিশকে আসামি গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করতে হয়। তবে ক্লু-লেস ঘটনার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেরিতে পেলে আসামি অধরা থেকে যাওয়ারও আশঙ্কা বাড়ে।

এদিকে এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন জানন, মামলায় অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও মেডিকেল সার্টিফিকেট অপরিহার্য। সেগুলো পেতে দেরি হলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটে ও আদালতে প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়।

অন্যদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আটকে থাকা প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সেলিম রেজা জানা ন, মৃত্যুর স্পষ্ট কারণ না থাকলে ভিসেরা ও হিস্টোপ্যাথলজি টেস্ট করা হয়। সেগুলোর প্রতিবেদন পেতে দেরি হলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়। তাছাড়া জনবল সংকট, মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা, ক্লাস নিতে ব্যস্ত সময় পার করার মতো অনেক কাজের চাপ থাকে।

এ প্রসঙ্গে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান জানান, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশ থেকে ঢামেক মর্গে ১৫০টি লাশ আনা হয়েছিল। তার মধ্যে ৬৩টি ছিল অজ্ঞাত লাশ। সবকটি লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর