বিদেশ : আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল বুধবার অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আফগান তালেবান সরকার। কয়েক দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই দেশের মধ্যে নাজুক শান্তি পরিস্থিতি আবারও ভেঙে পড়েছে। গত সপ্তাহে হওয়া সংঘর্ষে ডজনখানেক মানুষ নিহত হওয়ার পরও উত্তেজনা না কমে বরং আরো বেড়েছে। একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সামপ্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে—আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানি ‘জঙ্গিরা’ হামলা চালাচ্ছে, তাই তালেবান প্রশাসন যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তবে আফগান তালেবান পাকিস্তানি জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ গতকাল বুধবার এঙ্ ে(পূর্বের টুইটার) পোস্টে জানান, ‘আজ ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। এতে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ’মুজাহিদ আরো দাবি করেন, তালেবান যোদ্ধারা বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে, তাদের কয়েকটি পোস্ট ও ঘাঁটি দখল করেছে, অস্ত্র ও ট্যাংক জব্দ করেছে এবং বেশিরভাগ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারতের সফরে গেছেন—যা পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। সফরকালে ভারত ও আফগানিস্তান সম্পর্ক জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করবে, অন্যদিকে আফগান তালেবানও ভারতে তাদের কূটনীতিক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এতে স্পষ্ট, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই আফগানিস্তান এখন ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তালেবানকেই সংঘর্ষের জন্য দায়ী করেছেন। পাকিস্তানের চামান জেলার প্রশাসক হাবিব উল্লাহ বাঙ্গুলজাই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘তালেবান বাহিনী চামান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানি পোস্টে হামলা চালায়। সংঘর্ষে আমাদের চারজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।’ তিনি জানান, ভোরের দিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে লড়াই চলে এবং পরে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। দুই দেশের মধ্যকার ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্তে প্রায়ই এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটে। তবে গত সপ্তাহের লড়াই ছিল ২০২১ সালে কাবুলে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ। সংঘর্ষের পরপরই দুই দেশ সীমান্তের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক সীমান্তে আটকা পড়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দুই দেশের বাণিজ্য, যা আফগানিস্তানের মতো স্থলবেষ্টিত ও দরিদ্র দেশের জন্য বড় ধাক্কা। পাকিস্তানই আফগানিস্তানের প্রধান খাদ্য ও পণ্যের উৎস। সামপ্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও বেড়েছে। চীন দুই দেশকে তাদের নাগরিক ও বিনিয়োগ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে, রাশিয়া সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন প্রয়োজনে তিনি এই সংঘাতের অবসানে সহায়তা করতে পারেন। সূত্র : রয়টার্স