বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত হয়েছে। একই সময়য়ে আহত হয়েছেন আরও ৯৮২ জন। এর মধ্যে শুধু সড়কেই ৫০৪টি দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত হয়েছেন।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর মাসে ১৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৯ জন নিহত এবং ১৮৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ২৯ দশমিক ০১ শতাংশই মোটরসাইকেলে। এছাড়া, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। এই অটো নিবন্ধন দেওয়া হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দ্বিগুণ হবে।
সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে, যেখানে ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২২ জন নিহত ও ২১৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ২২টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গাড়ি চাপায় ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে এবং ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। মোট দুর্ঘটনার ৪৫ দশমিক ০৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে এবং ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ ফিডার রোডে (সমান্তরাল রাস্তা) সংঘটিত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি রেলপথে সেপ্টেম্বর মাসে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ১৫ জন আহত ও ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন বিভিন্ন পরিবহণের চালক (১২৬ জন), পথচারী (১০২ জন), নারী (৬৭ জন) ও শিশু (৪৯ জন)। এছাড়া ৫৬ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ১ জন আইনজীবী, ১ জন চিকিৎসক এবং ৫ জন পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বর্ষায় সড়কে গর্ত সৃষ্টি, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা সড়কবাতি না থাকা এবং অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের ব্যবহার।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সংগঠনটি অবিলম্বে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করার, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের এবং মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।