বিদেশ : নতুন এক নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। মানবাধিকার, যৌন হয়রানি ও নারীবিষয়ক অধ্যয়নও এখন বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের তালিকায় থাকা ৬৭৯টি বইয়ের মধ্যে প্রায় ১৪০টিই নারীদের লেখা। এমনকি রাসায়নিক গবেষণাগারে নিরাপত্তা নামের বইও নিষিদ্ধ তালিকায় পড়েছে। তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘শরিয়া ও শাসনব্যবস্থার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৮টি পাঠ্যবিষয় পড়ানো যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেন্স সোশিওলজি’। চার বছর আগে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান নারীশিক্ষা ও নারীর অধিকার নিয়ে একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করে আসছে। দেশটিতে এখন ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ নেই। ২০২৪ সালের শেষদিকে নীরবে বন্ধ হয়ে যায় ধাত্রীবিদ্যা কোর্স। এবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের লেখা বই ও নারীবিষয়ক পাঠ্যক্রমই মূল নিশানা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানোর সুযোগ থাকছে না বলে জানান বই পর্যালোচনাকারী কমিটির এক সদস্য। শুধু নারীদের বই নয়, ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আফগান সংস্কৃতিতে ইরানি উপাদানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোট ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বই নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছে, যার মধ্যে ৩১০টির লেখক ইরানি কিংবা বইগুলো ইরানে প্রকাশিত। এতে উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির শিক্ষকেরা। এক অধ্যাপক বলেন, ‘ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈশ্বিক অ্যাকাডেমিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করত। এগুলো বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ের ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। ’তবে এমন নিষেধাজ্ঞায় অবাক হননি দেশটির নারী অধিকারকর্মী ও সাবেক উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি। তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে তালেবানের ধারাবাহিক নারীবিদ্বেষী নীতির অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। তার লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে। এদিকে তালেবান সরকার এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।