
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আদালতের দৃষ্টিতে ফেরারি বা পলাতক আসামিদের প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা। ইসির এ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সংস্কার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আদালতে চলমান মামলায় রায় ঘোষণার আগে শুনানিতে হাজির না হলে এবং আদালত কাউকে পলাতক ঘোষণা করলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। এতদিন শুধু সাজা হলে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান ছিল। নতুন এ প্রস্তাবনা কার্যকর হলে অভিযুক্তদের অনুপস্থিতির দায়েও প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ হবে।
এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন। বিদেশে গিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর সুযোগ থাকছে না। প্রার্থীদের জামানতও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইসি—২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তা ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নিয়মেও পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। এখন থেকে কেবল প্রতিনিধি পাঠিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে না, বরং প্রার্থী নিজে বা তার প্রস্তাবকারীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও, সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষে সরকারের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতি তা অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করবেন।”
নির্বাচন কমিশনার আব্দর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, খসড়ায় আরও বেশ কিছু প্রস্তাব যুক্ত আছে। যেমন—সমভোটে লটারি পদ্ধতি বাদ দিয়ে পুনর্নির্বাচন করা, একক প্রার্থিতার ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট চালু করা, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করা, জোট গঠন করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করা, ঋণখেলাপি হলে ভোট-পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা এবং প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটের নিবন্ধনের সুযোগ রাখা।
তিনি বলেন, “প্রার্থী হতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের সুপারিশ রাখা হয়নি। তবে একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট চালু হলে ডামি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তবুও আমরা মনে করি, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এ পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
সব মিলিয়ে ইসির পাঠানো সংস্কার প্রস্তাবনায় তিন ডজনেরও বেশি পরিবর্তন যুক্ত হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে এগুলো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে কার্যকর হতে পারে