সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা আতঙ্ক, কেরালায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত অন্তত ৪২

প্রতিনিধি: / ১৪০ দেখেছেন:
পাবলিশ: বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিদেশ : ‘নেগেলেরিয়া ফাউলেরি’ নামের ভয়াবহ এক ক্ষুদ্রজীব কেরালা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য সংকট। ক্ষুদ্রজীবটি সাধারণত ‘ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা’ বা ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ নামে পরিচিত। ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত কেরালায় প্রাণঘাতী ‘অ্যামেবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিসে (পিএএম) আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৪২ জন। আগস্টের শেষ দিকে কোঝিকোডে মাত্র তিন মাস বয়সী এক শিশু ও ৫২ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। এর আগে আগস্টের শুরুতে ৯ বছরের এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়। শুধু আগস্টেই মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় তিনজনে। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক একাধিক রোগী চিকিৎসাধীন। কেরালা সরকার দ্রুত ‘ওয়াটার ইজ লাইফ’ নামে একটি ক্লোরিনেশন অভিযান শুরু করেছে। কূপ, পানির ট্যাংক, জনসাধারণের স্নানের জায়গাসহ সবখানেই জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, জনগণকে সচেতন করতে ও বর্ষাকালে নিরাপদ পানি ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই সংক্রমণ অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায় এবং মৃত্যুহার প্রায় শতভাগের কাছাকাছি। সংক্রমণের ১ু১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। গড় সময় প্রায় ৫ দিন। প্রাথমিক উপসর্গে তীব্র জ্বর ও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, আলোতে সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। পরবর্তী ধাপে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন, খিঁচুনি, ভারসাম্যহীনতা, কোমা এবং কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়। কোঝিকোডের নয় বছরের শিশুটি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। অপরিশোধিত কূপ বা পুকুরের পানিতে গোসল বা সাঁতার এড়িয়ে চলুন। নাক পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই ফুটানো পানি, ফিল্টারকৃত বা বোতলজাত পানি ব্যবহার করুন। প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাথা ডুবানো, ডাইভ দেওয়া বা পলিমাটি নাড়ানো থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে নাক ক্লিপ ব্যবহার করতে হবে। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং সামপ্রতিক সময়ে পানির সংস্পর্শে আসার তথ্য দিতে হবে। ‘নেগেলেরিয়া ফাউলেরি’ একটি উষ্ণ পানির অণুজীব। এটি সাধারণত কূপ, পুকুর, হ্রদ, নদী এবং অপর্যাপ্তভাবে ক্লোরিন দেওয়া সুইমিংপুলে জন্মায়। পানি নাকের ভেতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলে এটি দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে ‘অ্যামেবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিসে (পিএএম) রোগ সৃষ্টি করে। ভারতে এর ঘটনা বিরল, তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে কেরালায় ৩৬ জন আক্রান্ত ও ৯ জনের মৃত্যু ঘটে, যা এর আগের দশকগুলোর তুলনায় বহুগুণ বেশি। বর্ষার সময় গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অণুজীবটি দ্রুত বংশবিস্তার করে। অপরিশোধিত কূপ, পুকুর ও কমিউনিটি পানির উৎসে মল ও জৈব বর্জ্যের মিশ্রণও এর বিস্তার ঘটায়। পিএএম রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে ওষুধ মিল্টেফোসিন এবং আক্রমণাত্মক চিকিৎসার মাধ্যমে কয়েকজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্বে বিরল হলেও এই সংক্রমণ ভয়াবহ। কেরালায় একের পর এক মৃত্যু ও নতুন আক্রান্তের খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তবে সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রুত পদক্ষেপ, সচেতনতা এবং নিরাপদ পানির ব্যবহার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক হতে পারে।


এই বিভাগের আরো খবর