সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

পুলিশের গাড়িচাপায় তরুণের মৃত্যুর পর ইন্দোনেশিয়ায় তীব্র হয়েছে বিক্ষোভ

প্রতিনিধি: / ১৩৭ দেখেছেন:
পাবলিশ: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫

বিদেশ : গত সোমবার থেকে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আইনপ্রণেতাদের বেতন-ভাতা কমানো, শ্রমের মজুরি বাড়ানো, কর কমানো এবং শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থার দাবি। ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন চলা বিক্ষোভগুলো দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মাঝে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দমনের সময় পুলিশের গাড়িচাপায় একজন তরুণ ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যু বিক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ শুক্রবার এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন শহরে। আফান কুর্নিয়াওয়ান নামের ছেলেটির মৃত্যুর দৃশ্য দেশব্যাপী ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে জবাবদিহিতার দাবিতে হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর পর শোকাহত মা এরলিনা সিঙ্গাপুরভিত্তিক দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেছেন, ‘আমি চাই যে ব্যক্তি আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাকে আইনের মাধ্যমে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক। সে সবেমাত্র একটি খাবার ডেলিভারি শেষ করেছিল।’ অভাবের সংসারে আফান ছিল পরিবারের মেরুদণ্ড। ৪১ বছর বয়সী গৃহকর্মী এরলিনা বলেন, ‘সে আমাদের পরিবারের মেরুদণ্ড ছিল। খুব কঠোর পরিশ্রম করতো। চাকরির টাকা জমিয়ে আমাদের গ্রাম লামপুংয়ে (দক্ষিণ সুমাত্রায়) আমাদের জন্য জমি কিনে একটি বাড়ি তৈরি করেছে।’ আইনপ্রণেতাদের অতিরিক্ত ভা দেওয়ার বিরুদ্ধে জনরোষের ফলে জাকার্তায় এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বড় বিক্ষোভ চলাকালীন এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরলিনার মতে, ২৮ আগস্ট রাতে আফান যখন মধ্য জাকার্তার পেজোম্পোঙ্গানে একটি বিক্ষোভের মধ্যে আটকা পড়েন, তখন একটি ডেলিভারি অর্ডার রেখে আসছিলেন। একটি আধাসামরিক কৌশলগত গাড়ি ভিড়ের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে যায়, তাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর ৭ জন অফিসারকে আটক করা হয়েছে এবং গাড়িটি কে চালাচ্ছিল, তা নির্ধারণের জন্য তদন্ত চলছে। ২৮ আগস্টের শেষের দিকে সিপ্টো মাঙ্গুনকুসুমো হাসপাতালে জাতীয় পুলিশ প্রধান জেনারেল লিস্টিও সিগিত প্রাবোও নিহত তরুণের পরিবারের এক সদস্যকে সান্ত্বনা দিতে জড়িয়ে ধরেন। আফানের আত্মীয়দের তখন কাঁদতে দেখা যায়। পুলিশপ্রধান পরিবারের সঙ্গে দেখা করে জনসমক্ষে ক্ষমা চান এবং প্রতিশ্রুতি দেন, পুলিশ এর দায় নেবে। জেনারেল লিস্টিও সিগিত প্রাবোও বলেন, ‘আমি প্রয়াত আফফানের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং অবশ্যই তার পুরো পরিবারের প্রতিও। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহানুভূতি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ আফফান তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তার বাবা ছোটখাটো চাকরি করেন এবং পরিবারটি পরিবার চালানোর জন্য আফফানের উপার্জনের ওপর নির্ভর করেন। প্রতিবেশীরা তাকে পরিশ্রমী এবং বিবেকবান ব্যক্তি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি কখনো ঝামেলায় জড়াননি। গতকাল শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো আফানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি কর্মকর্তাদের ‘অতিরিক্ত কর্মকাণ্ডের’ নিন্দা করেছেন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসারদের অতিরিক্ত কর্মকাণ্ডে আমি হতবাক এবং হতাশ। আমি গত রাতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। জড়িত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যদি দেখা যায় যে, তারা অনুপযুক্ত ও কার্যকর নিয়মের বাইরে কাজ করেছেন, তাহলে আমরা আইন অনুসারে কঠোরতম ব্যবস্থা নেব।’ তিনি ইন্দোনেশিয়ানদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে, আমি সকল নাগরিককে শান্ত থাকার এবং আমার নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর আস্থা রাখার জন্য আবেদন করছি। আমি যে সরকারকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, তা আমাদের জনগণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।’

অভিজাতদের সুবিধা এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের গাড়িটি ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা মারছে। বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আফান সময়মতো পালাতে পারেননি। ফুটেজে দেখা গেছে, গাড়িটি তাকে ধাক্কা দেওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য সে স্থির হয়ে যায়, তারপর আবার তার শরীরের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়িটি চলে যায়। ফুটেজে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দেওয়া হয়েছে বলে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা গাড়িটির পেছনে ধাওয়া করে, হাতের কাছে যা পায় ছুঁড়ে মারে। সপ্তাহজুড়ে ইন্দোনেশিয়ার শহরগুলোতে ধারাবাহিক এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রতি ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও হতাশার প্রতিফলন ঘটায়। ২৫ আগস্ট পার্লামেন্টের বাইরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা পাথর, আতশবাজি এবং ধারালো বাঁশের কাঠি নিক্ষেপ করে। পুলিশ জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এই ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আইন প্রণেতাদের জন্য একটি নতুন ভাতা প্যাকেজ। গত ১৯ আগস্ট এটি ঘোষণা করা হয়। নতুন প্যাকেজের আওতায় আইনপ্রণেতারা এখন ৬.৫ মিলিয়ন রুপিয়ার মূল বেতনের পাশাপাশি আবাসনের জন্য মাসে ৫০ মিলিয়ন রুপিয়া, খাবারের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ রুপিয়া এবং পরিবহনের জন্য ৭০ লাখ রুপিয়া পাবেন। এই সংখ্যা জাকার্তার ন্যূনতম মজুরির প্রায় ১৪ গুণ বেশি।

বিক্ষোভ তীব্র থেকে হতে পারে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, সরকার যদি জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তবে বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। নাগরিক অধিকার গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের লোকেরা পুলিশের কঠোর হস্তক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছে।


এই বিভাগের আরো খবর