গাজীপুর শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকায়—চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে—দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) রোমহর্ষকভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত আটটার দিকে ঈদগাহ মার্কেটের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পর পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারী ও পুরুষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কালো পোশাকের এক নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন নীল জামা পরা এক ব্যক্তি। এরপর তিনি নারীকে মারধর করলে হঠাৎ কয়েক যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। আহত ব্যক্তি বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যান। ঠিক এই মুহূর্তে ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।
সাংবাদিক তুহিনের এই ভিডিও ধারণ করাকেই জীবনের শেষ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা বুঝতে পেরে তুহিনকে ভিডিও মুছে ফেলতে বাধ্য করে। তুহিন অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে ধাওয়া করে ঈদগাহ মার্কেটের একটি দোকানে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর গলা, বুক, পিঠ ও কাঁধে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
তুহিনের বন্ধু সাংবাদিক শামীম হোসেন জানান, তারা দুজন একসাথে হাঁটছিলেন। হঠাৎ ঘটনাটি ঘটে গেলে তুহিন ভিডিও করতে থাকেন। কিছু সময় পর অস্ত্রধারীরা পেছন ফিরে তাঁকে লক্ষ্য করে তেড়ে আসে। তখন তুহিন চা দোকানে আশ্রয় নেন। দুর্বৃত্তরা দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, বাদশা মিয়া নামের আহত ব্যক্তি একটি চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন। ওই নারী ও তাঁর সঙ্গে থাকা দল একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অংশ। এই চক্র গাজীপুর নগরের বাসন, ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ফুটেজে দেখা যাওয়া নারীসহ চক্রটির সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জিএমপির উপ-কমিশনার রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “তুহিন হত্যার পেছনে চাঁদাবাজির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি নারী সংক্রান্ত ঘটনায় ভিডিও ধারণ করাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত হত্যা। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।”
তুহিন সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানিতে প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন। তিনি গাজীপুরের চান্দনায় স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
তুহিনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে চাঁদাবাজি বা বিতর্কিত কোনো বিষয় নেই। বরং তিনি শহরের বিভিন্ন সমস্যা ও জনদুর্ভোগ নিয়ে নিয়মিত পোস্ট দিতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায়ও তিনি ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন। কিন্তু কিছু সময় পরই দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ হারাতে হয় তাঁকে।
তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনা হবে।