২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে নিকেতনের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, অস্ত্র ও এফডিআরসহ গ্রেপ্তার হন আলোচিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় মানিলন্ডারিং, অস্ত্র ও মাদক আইনে তিনটি মামলা। এর মধ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিলে অবশেষে খালাস পেলেন জিকে শামীম।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারপতি জাবিদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে শামীমকে খালাস দেন। একইসঙ্গে মামলার অন্য আসামিদের বিষয়ে এখনো কোনো আপিল নিষ্পত্তি হয়নি।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই জিকে শামীমকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও তার সাত দেহরক্ষীকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আদেশে বলা হয়েছিল, নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধ না করলে তাদের আরও এক বছর করে কারাভোগ করতে হবে।
আলোচিত এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছিলেন, “অস্ত্রবাজ, টেন্ডারবাজ ও অর্থপাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা আদর্শকে ব্যবহার করে রাতারাতি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে, যা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। এদের প্রতিহত করতে হবে।”
কী ছিল মামলার অভিযোগ?
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে অবস্থিত নিজের বাড়ি ও কার্যালয় থেকে জিকে শামীমকে সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ ঘণ্টার ওই অভিযানে উদ্ধার করা হয় নগদ এক কোটি ৮১ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুর ডলার, ১৬৫ কোটি টাকার ১০টি এফডিআর, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ।
পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান গুলশান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করেন। এতে বলা হয়, জিকে শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা, চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেন।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
অভিযান চলাকালে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের সময় জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান ‘জিকে বিল্ডার্স’-এর হাতে সরকারি অর্থায়নে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ২২টি নির্মাণ প্রকল্প ছিল। তবে অভিযানের পর এসব প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল করে সরকার এবং তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
খালাস পেলেও অন্য মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত
জি কে শামীমের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। ফলে মানিলন্ডারিং মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পেলেও কারামুক্তির সম্ভাবনা এখনই নেই।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই জিকে শামীমের উত্থান ঘটে। নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও সংগঠনটি তার সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা স্বীকার করেনি।